৯৩তম অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ‘নোম্যাডল্যান্ড’। এর মধ্য দিয়ে প্রথম এশীয় এবং দ্বিতীয় নারী হিসেবে সেরা পরিচালকের খেতাব জিতে ইতিহাস গড়লেন চীনের ক্লোয়ি ঝাও। এর আগে ২০০৯ সালে ‘দ্য হার্ট লকার’ ছবিটি পরিচালনার সুবাদে প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে অস্কার পেয়েছিলেন ক্যাথরিন বিগলো।
‘নোম্যাডল্যান্ড’-এর গল্পটা ফার্ন নামের এক নারীকে ঘিরে। আমেরিকার মহামন্দার সময় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ষাটে পা দেওয়া ফার্ন। এরপর ছুটে যান পশ্চিমে। বেছে নেন এ যুগের যাযাবর জীবন।
আর ফার্নের চরিত্রটাকে দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলে সেরা অভিনেত্রীর অস্কারটা বাগিয়ে নিয়েছেন ফ্রান্সেস ম্যাকডোরমান্ড। এ নিয়ে তিনটি অস্কার পেলেন এ অভিনেত্রী। তিনটিই পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে (আগের দুটি ছবি হলো- ‘ফারগো’, ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং মিসৌরি’)।
‘দ্য ফাদার’ ছবিতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পেয়েছেন অ্যান্থনি হপকিনস। একই সঙ্গে তিনি আবার অস্কারজয়ী সবচেয়ে বেশি বয়সী অভিনেতাও।
পুরস্কার হাতে নিয়ে ক্লোয়ি জানালেন তার অনুপ্রেরণার কথা- ‘আমি দুনিয়ার যেখানে যার সঙ্গেই মিশেছি, তাদের ভালো দিকটাই দেখেছি। আর তাই আমার এই পুরস্কারটা তাদের জন্য উৎসর্গ করছি, যারা নিজেদের মধ্যে ভালো মানুষটাকে ধরে রাখার মতো সাহস দেখিয়ে চলেছেন, তা যতোই কঠিন হোক না কেন।’
এমারেল্ড ফেনেল বললেন, ‘ট্রফিটা বড্ড শীতল আর ভারী ঠেকছে। আর আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো না, কারণ এটা ঠিক ইংরেজদের মতো আচরণ হবে না।’
সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের পুরস্কার হাতে নেওয়ার সময় সবাইকে আরেক দফা আবেগে ভাসিয়েছেন ডেনমার্কের পরিচালক থমাস ভিনটারবার্গ। জানালেন, যে ছবির জন্য অস্কার পেলেন, সেটার শুটিং শুরুর চারদিনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় তার কিশোরী কন্যাসন্তান মারা যায়। প্রচণ্ড কষ্ট বুকে চেপে ঠিক করেন মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখতেই এ সিনেমার কাজ শেষ করবেন। জীবনের জয়গানের থিম নিয়ে বানানো সিনেমাটির শেষে তাই মেয়ের নাম ‘আইডা’ জুড়ে দেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যেও জমকালো আয়োজনে দুটি ভেন্যুতে বসেছে অস্কারের ৯৩তম আসর। বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৬ এপ্রিল) ভোর ৬টায় লস অ্যাঞ্জেলসে বসে এবারের আসর। তারকাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে জমকালো এ আয়োজনে।
এবারের আসরে অন্যান্য পুরস্কার জিতেছেন-
সেরা চলচ্চিত্র : নোম্যাডল্যান্ড (ক্লোয়ি ঝাও)
সেরা অভিনেতা : অ্যান্থনি হপকিনস (দ্য ফাদার)
সেরা অভিনেত্রী : ফ্রান্সেস ম্যাকডোরম্যান্ড (নোম্যাডল্যান্ড)
সেরা পরিচালক : ক্লোয়ি ঝাও (নোম্যাডল্যান্ড)
সেরা সহ-অভিনেতা : ড্যানিয়েল কালুইয়া (জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মেসিয়া)
সেরা সহ-অভিনেত্রী : ইউ-জুং ইউন (মিনারি)
সেরা চিত্রনাট্য (মৌলিক) : প্রমিজিং ইয়ং উইম্যান (এমারেল্ড ফেনেল)
সেরা চিত্রনাট্য (অ্যাডাপটেড) : দ্য ফাদার (ফ্লোরিয়ান জেলার)
সেরা আন্তর্জাতিক কাহিনিচিত্র : অ্যানাদার রাউন্ড (থমাস ভিনটারবার্গ, ডেনমার্ক)
সেরা অ্যানিমেটেড ছবি : সোল (পিক্সার স্টুডিও)
সেরা পোশাক পরিকল্পনা : অ্যান রথ (মা রেইনিস ব্ল্যাক বটম)
সেরা সম্পাদনা : সাউন্ড অব মেটাল (মিকেল ইজি নিলসন)
সেরা রূপ ও চুলসজ্জা : মা রেইনিস ব্ল্যাক বটম
সেরা আবহসংগীত : সোল (জন বাতিস্তা, ট্রেন্ট রেজনর ও অ্যাটিকাস রস)
সেরা মৌলিক গান : ফাইট ফর ইউ (গ্যাব্রিয়েলা উইলসন-এইচইআর, জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মেসিয়া)
সেরা শিল্প নির্দেশনা : ম্যাঙ্ক
সেরা শব্দ সম্পাদনা ও মিশ্রণ : সাউন্ড অব মেটাল (নিকোলাস বেকার, জেমি বাকট, মিশেল কুটোলেংক, কারলোস করতেস, ফিলিপ ব্লাদ)
সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস : টেনেট (অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, ডেভিড লি, অ্যান্ড্রু লকলি, স্কট ফিশার)
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : টু ডিসট্যান্ট স্ট্রেঞ্জারস (ট্রেভন ফ্রি ও মার্টিন ডেসমন্ড রো)
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র : কোলেট (অ্যান্থনি জিয়াচিনো ও অ্যালিস ডোয়ার্ড)
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড ছবি : ইফ অ্যানিথিং হ্যাপেনস আই লাভ ইউ (উইল ম্যাককরমেক ও মাইকেল গোভিয়ার)
সেরা সিনেমাটোগ্রাফি : ম্যাঙ্ক (এরিখ মেসারস্মিডট)