জঙ্গিদের অর্থদাতা ইসলামী ব্যাংক-এসআইবিএলের সঙ্গে এইচএসবিসির লেনদেন

জঙ্গিদের অর্থদাতা ইসলামী ব্যাংক-এসআইবিএলের সঙ্গে এইচএসবিসির লেনদেন

জঙ্গিদের অর্থায়নে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সোস্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডকে (এসআইবিএল) অর্থ দিয়েছে হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। গুরুতর এ অভিযোগ করেছে মার্কিন সিনেটের একটি উপ-কমিটি ।

এছাড়া মেক্সিকোর মাদক ব্যবসার অবৈধ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত সিনেটের ওই উপ-কমিটি সোমবার একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করেছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সিনেট কমিটির এ ধরনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব ফেলে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এইচএসবিসি শাখা সৌদি আরব ও বাংলাদেশের এমন কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়েছে, যারা আল কায়েদা এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর্থিক সহযোগিতা করার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো শাখার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবৈধ অর্থপাচার (মানি লন্ডারিং) সম্পন্ন হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকটির কার্যক্রম পরিচালনাকারী শাখা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।  মঙ্গলবার সিনেটে এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এইচএসবিসির শাখাকে ব্যবহার করে মেক্সিকোর মাদক পাচারকারীরা তাদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে বলে দাবি করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে। এছাড়া সিরিয়া, কাইম্যান আইল্যান্ড, ইরান এবং সৌদি আরবের কালো টাকাও ব্যাংকটির কোনো কোনো শাখার মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে।

এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে আসা অভিযোগের ব্যাপারে এইচএসবিসির সংশ্লিষ্ট নির্বাহীরা কর্ণপাত না করায় এ সমস্যা দীর্ঘ আট বছর ধরে চলে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

পাশাপাশি ব্যাংকটির কোনো কোনো শাখা ইরান ও অন্যান্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের সঙ্গে লেনদেনে জড়িত ছিলো বলেও দাবি করা হয়েছে।

তবে এ সব অভিযোগের ব্যাপারে এইচএসবিসি এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তাদের নির্বাহীরা শুনানির সময় সংঘটিত ভুলগুলোর ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুনানির সময় ব্যাংকের কার্যক্রমে সংঘটিত ভুলগুলোর ব্যাপারে তাদের গৃহীত ব্যবস্থার ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ভুলগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয় ওই বিবৃতিতে।

পাশাপাশি এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়ে ব্যাংকটি তাদের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে গত বছর পরিবর্তন করেছে বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বলেছে, তারা এইচএসবিসির মাধ্যমে সংঘটিত ‘মানি লন্ডারিং’ কার্যক্রমের ওপর একটি তদন্ত পরিচালনা করছে।

এ প্রসঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে এইচএসবিসির সঙ্গে কথা বলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস বিভাগের মুখপাত্র অ্যালিসা ফিনেলি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তবে সম্ভাব্য কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

গত বছর এইচএসবিসির প্রকৃত মুনাফা ছিলো এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর ৮০টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ব্যাংকের শাখাটি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দশটি ব্যাংকের্একটি।

 

বাংলাদেশ