চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে এই মুদ্রানীতি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বারের (জানুয়ারি-জুন) ধারাবাহিকতায় এবারও অনেকটা সংযত মুদ্রানীতি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্রমতে, মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে রেওয়াজ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কয়েকটি বৈঠক করে। গভর্নরের সভাপতিত্বে এসব বৈঠকে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আমলা, সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে তাদের মতামত দেন।
এদিকে সূত্র বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জন ও মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ নামিয়ে আনতে সমন্বয় করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। তবে সরকারের ঋণ প্রবাহ অটুট রাখার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে উৎপাদনশীল খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এবারের মুদ্রানীতিও সংকোচনমূলকই থাকবে। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে মুদ্রানীতির মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার আলোকে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে সীমিত রাখার চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে প্রবৃদ্ধিও (জিডিপি) ৭ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এই দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করতে কিছু সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের কয়েকটি বিষয়ে ছাড় দিতে হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অভ্যন্তরীণ যোগান আরও বাড়িয়ে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। আর সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে ১৬ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, অর্থবছর শেষে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। যদিও পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) জুন মাসে মূল্যস্ফীতি হার ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংযত মুদ্রানীতি এবং সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে বিগত ছয়মাস ধরে ব্যবসায়ী মহল ঋণ পাচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ করে আসছিলেন। কারণ এর ফলে বেড়ে যায় ঋণের সুদের হার। অবশ্য এর জন্য ব্যাংকগুলোর দীর্ঘদিনের তারল্য সংকটও কিছুটা দায়ী।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে অর্থনীতিবিদরা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে আসছেন, সংযত মুদ্রানীতি দিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ এর জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা এমন মুদ্রানীতি থেকে আসবে না। তাই অনেক অর্থনীতিবিদ বাজেট এবং মুদ্রানীতিকে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করেন। এর মধ্য দিয়েই ২৭ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় জানায়, সরকারের বাজেট নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে কোনো সমন্বয় নেই। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেন, ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে না। যে পরিমাণ বিনিয়োগ আছে তা দিয়েই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।