গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির দাবি করা বিভিন্ন ফি ও ভ্যাট কর্তনের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিটিআরসি, এনবিআর ও গ্রামীণফোনকে আপিলের অনুমতি দেন।
আগামী ২ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই রাকিব।
আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই রাকিব।
এনবিআরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুরাদ রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনের কাছে স্পেক্ট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ অতিরিক্ত ২৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা দাবি করে বিটিআরসির দেওয়া চিঠির অংশ বিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
তবে গ্রামীণফোন লাইসেন্স নবায়ন ও স্পেক্ট্রাম ফি থেকে ভ্যাট কর্তন করতে পারবে না বলে চিঠির একটি অংশ বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, চিঠিতে উল্লেখিত ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়টিতে অনিয়ম হয়নি। উৎসে আটকে না রেখে গ্রামীণফোনকে দাবিকৃত অর্থের (১৮০০ মেগাহার্জের ৭ দশমিক ৪ স্পেক্ট্রামের জন্য মার্কেট কম্পিটিশন ফি ব্যতীত) সঙ্গে ভ্যাট যোগ করতে হবে এবং তা সরাসরি সরকারকে (এনবিআর) শোধ করতে বলা হয়। এছাড়াও গ্রাহকদের দ্বারা চূড়ান্তভাবে পরিশোধিত ভ্যাট থেকে উল্লেখিত ভ্যাটের জন্য গ্রামীণফোন আইন অনুসারে ক্রেডিট পাবে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে বিটিআরসি, এনবিআর ও গ্রামীণফোন আপিলের আবেদন করে।
খোন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, “গ্রামীণফোনের কাছে স্পেক্ট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ অতিরিক্ত ২৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা দাবি করে বিটিআরসির দেওয়া চিঠির অংশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে বিটিআরসি আপিলের অনুমতির আবেদন করা হয়েছে। আপিল বিভাগ আজ অনুমতি দিয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, গ্রামীণফোন এনবিআরকে যে ভ্যাট দিবে তা পরে গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলে নিতে পারবে। এর বিরুদ্ধে এনবিআর লিভ টু আপিল দায়ের করে।”
মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, “গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নবায়ন ও স্পেক্ট্রাম ফি থেকে ভ্যাট কর্তন করতে পারবে না বলে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। গ্রামীণফোন রায়ের এ অংশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়েছিলো। আজ আদালত অনুমতি দিয়েছেন।”
গত ১৭ অক্টোবর গ্রামীণফোনকে দেওয়া এক চিঠিতে বিটিআরসি লাইসেন্স নবায়ন ও স্পেক্ট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ ৩ হাজার ৬ শত ২৪ দশমিক শূণ্য তিন কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলে। চিঠিতে ওই টাকা থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স না কাটতে বলা হয়।
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২০০৮ সালে সব পাওনা পরিশোধ করে তারা। পরিশোধ করা স্পেকট্রাম ফির বিপরীতে ২শত ৩৬ দশমিক ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত দাবি করা হয়েছে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে গ্রামীণ ফোন।
রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ অক্টোবর বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চ গ্রামীণফোনের কাছে স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি দাবি করে দেওয়া বিটিআরসির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। সেইসঙ্গে আদালত ওই টাকা দাবি করে দেওয়া নোটিশের ওই অংশের কার্যকারিতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ এই সংস্থার ছয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিতের জন্য বিটিআরসির চেম্বার আদালতে আবেদনের শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন চেম্বার জজ ইমান আলী।
পরে নিয়ম অনুযায়ী ৩ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নির্ধারণ করা বিশেষ চেম্বারজজ গ্রামীণফোনের কার্যক্রমে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ না করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন এবং বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। বিষয়টি হাইকোর্টে সুরাহা করার জন্য পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ আদেশ দেন।
এরপর নয় কার্য দিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে বিটিআরসি, এনবিআর ও গ্রামীণফোন আপিলের অনুমতির জন্য আবেদন করে। সোমবার আপিল বিভাগ আপিলের অনুমতি দেন।