‘সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয় অস্বীকার করেছিলেন বিদ্রোহীরা’

‘সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয় অস্বীকার করেছিলেন বিদ্রোহীরা’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় বিডিআর বিদ্রোহীরা পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যার বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। পরেও তারা হত্যার বিষয়ে কিছু বলেন নাই। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেনা অফিসারদের হত্যার বিষয়টি গোপন করেন।

পিলখানায় বিজিবি (সাবেক বিডিআর) সদর দফতরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দানকালে এ তথ্য দিয়েছেন নৌবাহিনী প্রধান জহির উদ্দিন আহম্মেদ।

সোমবার ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় কারাগার ও নবকুমার ইন্সটিটিউশন সংলগ্ন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি সাক্ষ্য প্রদান করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করছেন।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ‘‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় আমি নৌবাহিনীর প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ফোন পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিস যমুনায় যাই। সেখানে আগে থেকেই সেনাবাহিনীর প্রধান, বিমান বাহিনীর প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারেক উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী এলে আমরা মিটিং করি। কিন্তু পিলখানার ভিতরের অবস্থা জানতে না পারায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না।’’

‘‘পরে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ডিএডি হাবিব, ডিএডি নাসির, ডিএডি রহিম, ডিএডি জলিল, সিপাহী সেলিম রেজা, হাবিলদার রফিক, ল্যান্সনায়েক মনিরুজ্জামান, সিপাহী মনিরসহ ১২/১৪ জন বিডিআর সদস্যের একটি দল যমুনায় আসে। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলছিলেন। তাদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে ছিল, লিখিতভাবে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে হবে এবং তা সংসদে পাস করে দিতে হবে।’’

‘‘প্রধানমন্ত্রী তাদের মৌখিকভাবে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণার আশ্বাস দেন এবং বলেন, ‘তোমরা অস্ত্র সমর্পণ কর। নতুবা, তিন বাহিনীর প্রধানরা এখানে আছেন। তারা কঠোর অ্যাকশনে যাবেন।’ বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণে রাজি হন এবং পিলখানায় চলে যান। আলোচনার সময় তারা পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যার বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। পরেও তারা হত্যার বিষয়ে কিছু বলেন নাই। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেনা অফিসারদের হত্যার বিষয়টি গোপন করেন।’’

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করছেন।

১৩শ’ ৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদী লালবাগ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবজ্যোতি খীসাসহ বিডিআর হত্যাযজ্ঞ মামলায় এ পর্যন্ত ২৭০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

গত বছরের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় ও ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।

হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৮৫৬ জন। আসামিদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন, ২০ জন পলাতক এবং চারজন জামিনে আছেন।

মামলাটি তদন্তের সময়ই মারা যান বিডিআরের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) রহিম ও হাবিলদার শফিকুল ইসলাম। অভিযোগ শুনানি চলাকালে গত ১৫ মে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান আসামি হাবিলদার মতিউর রহমান।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে সাবেক বিডিআরের জওয়ানরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলিশের পরিদর্শক নবজ্যোতি খীসা প্রথমে লালবাগ থানায় এবং পরে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন।

আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, রমজান খান ফারুক আহমেদ, শামীম সরদারসহ প্রমুখ সাক্ষীদের জেরা করছেন।

বাংলাদেশ