সাবেক বিএনপি সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের বদনাম এখনও বাংলাদেশকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, “তাদের দুর্নীতির কারণে ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে সব ধরনের ঋণ বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই বদনাম এখনও বাংলাদেশকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।”
শনিবার আওয়ামী যুবলীগের ৬ষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “অনেক কষ্টে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। বারবার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করতে না পারে, নতুন করে খেলায় মাততে না পারে, সেজন্য প্রতিটি পাড়া মহল্লা ও গ্রামগঞ্জে যুবলীগের নেতাকর্মীদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো সতর্ক থাকতে হবে। যুবলীগের কর্মীদের মধ্য থেকেই যেন দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি হয়, আমি সেই আশা করি।”
প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, “অশান্তির আগুনে দেশকে পুড়িয়ে ছারখার করার ষড়যন্ত্র চলছে। যুব সমাজকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন মানুষের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু কার মনে অশান্তি আসে সেটা মানুষ জানে। সেই অশান্তির আগুনে দেশকে পুড়িয়ে ছারখার করার সকল কলা-কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না। যুদ্ধপরাধীদের বিচার হোক এটা তারা চায় না। এ জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে। দেশের মানুষ যা পেয়েছে, তা আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ফসল হিসেবে পেয়েছে। আওয়ামী লীগকে জনগণ যখনই ভোট দিয়েছে, আওয়ামী জনগণকে বিমুখ করেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেও জনগণের জন্য কাজ করে বিরোধী দলে থাকলে জনগণের জন্য কাজ করে।”
প্রধানমন্ত্রী বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানে বাংলাদেশ সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের দেশ হবে। মানুষের পেটে ভাত থাকবে না।”
শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করে, তার ছেলেরা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে, অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করে। তাদের দিয়ে দেশের মানুষ কি আশা করবে।”
প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে যুবলীগ সেই আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থেকেছে। দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজে কি পেলাম, না পেলাম সে চিন্তা না করে মানুষকে কি দিতে পারলাম সে চিন্তা করতে হবে। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ত্যাগকে অনুসরণ করতে হবে।” এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাড়ার আহ্বান জানান।”
শেখ হাসিনা যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংগঠন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হলে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সংগঠন ছাড়া কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না।”
দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে যুবলীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
এরপর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসের আমু, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।