লন্ডনের হান্টিংটনে মওদুদের বাড়ির খোঁজে দুদক

লন্ডনের হান্টিংটনে মওদুদের বাড়ির খোঁজে দুদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লন্ডনের হান্টিংটন শহরে কেনা বাড়ির বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে দুদক মওদুদের বাড়ির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে বলে দুদক সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সঙ্গে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশনের বৈঠকে লন্ডনে মওদুদের বাড়ির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে মওদুদ আহমদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব নতুন করে নেওয়ার চিন্তাও করছে কমিশন।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে এ বাড়ি সম্পর্কে দুদকের হাতে কিছু তথ্য রয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মওদুদের এ বাড়ি সম্পর্কে লেখা রয়েছে, ‘‘২০১০ সালের ৫ মার্চ লন্ডনের ১৫ হান্টিংটন এলাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাড়ি ক্রয় করেন। ৬০ হাজার পাউন্ড খরচ করে বাড়ির রেজিস্ট্রি ও কাগজপত্র বুঝে নেন মওদুদ। ব্যারিস্টার মওদুদের কেনা বাড়িটির বর্তমান মূল্য পৌনে পাঁচ কোটি টাকা।’’

এদিকে দুদক সূত্র জানায়, লন্ডনে মওদুদের বাড়ির ছবি ও ভিডিও তদন্তের প্রয়োজনে সংগ্রহের চেষ্টা করবে দুদক।
দুদকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনে তাকে এ বিষয়ে যে কোনো দিন তদন্ত কর্মকর্তারা দুদকের ভেতরে বা বাইরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘‘ তার (মওদুদ আহমদ) বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে এবং দেখবে দুদক।’’

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা এ নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুদকের উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩)  ও তদন্ত কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন ৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদিশিক নীতি শাখার মহাব্যবস্থাপকের কাছে একটি নোটিশ দেন। নোটিশে মওদুদ আহমদ লন্ডনে বাড়ি কেনার জন্য কোন উপায়ে দেশ থেকে টাকা নিয়েছেন- সে বিষয়টি দুদককে জরুরি জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দুদকের উপপরিচালক মোনায়েম হোসেন বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে লন্ডনে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৪ জুলাই দুদক নোটিস দেয়। ১১ জুলাই তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু মওদুদ ৮ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হয়ে দুদকের নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত তিন মাসের জন্য দুদকের নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

একই সঙ্গে নোটিশটি কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
মওদুদ আহমদের দায়ের করা এ রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাফর আহমদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

দুদকের চেয়ারম্যান ও দুদকের উপপরিচালককে (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে মওদুদ আহমদ নিজের পক্ষে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও খুরশীদ আলম খান।

প্রসঙ্গত, এর আগে জরুরি অবস্থার সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৩ জুলাই সম্পদের সম্পদ ও আয়ের বিবরণী চেয়ে মওদুদ আহমদকে নোটিশ দেয় দুদক। দুদকের নোটিশ অনুযায়ী মওদুদ আহমদ একই বছরে ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দুদকে দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে দুদক মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৪ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে স্থগিত রয়েছে।

বাংলাদেশ