বঙ্গবন্ধুর বিসিক ৫৫ বছরে নিরলসভাবে কাজ করছে দেশের উন্নয়নে

বঙ্গবন্ধুর বিসিক ৫৫ বছরে নিরলসভাবে কাজ করছে দেশের উন্নয়নে

বিসিকের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, গোলটবেলি বৈঠক আয়োজনসহ নানা অনুষ্ঠানরে আয়োজন করেছে বিসিক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মলিনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন।

দেশের ঐতিহ্যবাহী পুরনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ১৯৫৭ সালে এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট সরকারের শ্রম, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ মার্চ প্রাদেশিক আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন’ (ইপসিক) প্রতিষ্ঠার বিল উত্থাপন করেন। যার বর্তমান নাম বিসিক।

বঙ্গবন্ধুর ইপসিক অর্থাৎ বর্তমান বিসিক ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাত তথা শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিটি জেলায় স্থাপিত বিসিকের শিল্প সহায়ক কেন্দ্র, ৭৪ শিল্পনগরী কার্যালয়, ১টি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ১টি নকশা কেন্দ্র, ১৫টি নৈপুণ্য বিকাশ কেন্দ্র এবং লবণ উৎপাদন,  মৌমাছি পালন এবং দেশের ৩টি পার্বত্য জেলায় কুটির শিল্প উন্নয়ন কর্মসূচির কার্যালয় রয়েছে। এসব কার্যালয়ের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রকার সেবা-সহায়তা প্রদান করা হয়।

দেশের ৫৮টি জেলায় মোট ৭৪টি শিল্প নগরী স্থাপন করেছে বিসিক। শিল্পনগরীগুলোতে মোট ১০ হাজার ৩৫২টি শিল্প প্লট রয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল ২০১২ পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৬৭টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে ৯ হাজার ৭১৮টি পল্ট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব প্লটে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ২৭৭টি শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়েছে।

এসব শিল্প-কারখানার মাধ্যমে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোতে অর্থ-বছরে ২৯ হাজার ২৭ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী উৎপাদিত হয়েছে। এর মাঝে ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার পণ্য ছিল রফতানিযোগ্য।

উৎপাদনরত ৪ হাজার ১০টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৭৮২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানই রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদন করছে। একই সময়ে এ শিল্প ইউনিটগুলো থেকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাবদ সরকার প্রায় ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে।

বিসিক একক পণ্যভিত্তিক ৬টি বিশেষায়িত শিল্পনগরী প্রকল্প গ্রহণ করে ৩টির কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করছে। বাস্তবায়িত শিল্পনগরীগুলো হলো- রূপগঞ্জের জামদানি শিল্প নগরী ও গবেষণা কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারি শিল্প নগরী এবং ঢাকার মিরপুরে ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স।

দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংখ্যা ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৩৫৭টি (ক্ষুদ্র শিল্প ৯৫ হাজার ৬৬০টি, কুটির শিল্প ৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৭টি) এবং এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৩ লাখ ৮১ হাজার মানুষের।

এ খাতে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশজ উৎ‍পাদনে (জিডিপিতে) প্রবৃদ্ধির হার ৬.৩২ থাকলেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের হার ছিল ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্প খাতের (ম্যানুফেকচারিং) মোট অবদানের প্রায় ২৮ শতাংশই হচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের।

২০২১ সালের মধ্যে ৫২ লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশে উন্নীতকরণ এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ ও সরবরাহের যোগান সৃষ্টি করবে বিসিক।

বিসিকের সহায়তায় ১৯৬১ সাল থেকে দেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে উপকূলীয় এলাকায় সৌর পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। বিসিক লবণ চাষীদেরকে সাদা লবণ চাষে উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতির প্রয়োগ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বিসিক উদ্ভাবিত পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ সনাতন পদ্ধতির চেয়ে শতকারা ৩০ ভাগ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া উক্ত লবণের বাজার মূল্যও বেশি। দেশে বিকল্প লবণ উৎপাদন এলাকা তৈরির লক্ষ্যে বিসিক কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলেও লবণ উৎপাদনে কাজ করছে।

এছাড়া বিসিক চামড়া শিল্প, এপিআই শিল্প, নতুন শিল্পকারখান স্থাপন ও সম্প্রসারণে সহযোগিতা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, দেশে নারীউদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা, মধু উৎপাদন, পার্বত্য এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ