পদ্মাসেতু নির্মাণে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের সুপারিশ

পদ্মাসেতু নির্মাণে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের সুপারিশ

পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ঋণ চুক্তি বাতিলকে সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, বিশ্বব্যাংক অন্যায় ভাবে যে ঋণ চুক্তি বাতিল করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের এখন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে, ভবিষ্যতে আমরা আর বিদেশিদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা নেবো না।

তবে একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আনীত অভিযোগ তদন্ত করে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন তারা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা সম্ভব। রয়েছে কারিগরি জ্ঞানও। তবে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

এজন্য উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যে কমিটির প্রধান হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পদ্মাসেতু নির্মাণে দেশীয় অর্থায়নের জন্য বেশ কিছু খাত উল্লেখ করে সুপারিশ তুলে ধরেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা প্রকৌশল মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান, সাংসদ এবিএম আনোয়ারুল হক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ, কৃষিব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, বুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এএমএম শফিউল্লাহ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ।
সংগঠনের সভাপতি একেএমএ হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান।

প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘পদ্মাসেতু নির্মাণে টাকার অভাব হবে না। আমরা নাকে খৎ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে টাকা চাইতে যাবো কেন‍? সম্মান বিকিয়ে কেন চুক্তি করতে যাবো? বরং আমরা যদি নিজেদের অর্থে এটি করতে পারি তবে পৃথিবী আর আমাদের কিছু বলতে সাহস পাবে না। তবে শঙ্কা হচ্ছে, সুশাসন নিশ্চিত করা।’’

কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে। কেন আমরা বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল থাকবো? আমাদের চিন্তা, যেন বিদেশিদের সহায়তা ছাড়া চলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের জাতীয় আয়ের মাত্র দেড় শতাংশ বিদেশ থেকে আসে। তাই নিজেদের চিন্তার পরিবর্তন করতে হবে। মনোভাব পাল্টাতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যবস্থায় যারা সহায়তা দেয়, তারা সব সময় প্রভাব বিস্তার করতে চায়। সারা বিশ্বে এর প্রমাণ আছে। তবে আমার জানা মতে এমন কোন দেশ নেই যারা বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে গেছে।’’

তবে বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “বিশ্বব্যাংকের আনীত অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।“

তিনি আরো বলেন, “নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু তৈরিতে ডলারের যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে তা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, রেমিটেন্স এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে বন্ড বিক্রি করে ডলার সংগ্রহ করা যাবে। “

খলীকুজ্জমান বলেন, ‘‘আমাদের এখনই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করতে হবে। সেখানে সৎ লোকদের রাখতে হবে। পদ্মাসেতু চুক্তি বাতিলের ফলে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা আমাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।’’

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংক ১০ শতাংশ ঘুষ দাবির কথা বলছে, তা মিথ্যা। বরং চায়নিজ কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে তারাই ঘুষ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক নিজেই দুর্নীতি করে আমাদের ওপর চাপাতে চাইছে। আমাদের গায়ে কলংক দিতে চাইছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘অর্থের ছাড় করার আগেই কিভাবে দুর্নীতির অভিযোগ আসে? বাংলাদেশের পুলিশ যেমন মিথ্যা আসামি বানিয়ে মামলা দেয়, বিশ্বব্যাংক আজ মিথ্যাভাবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে।’’

তার মতে, ‘‘আমরা সাহস করে শুরু করলে অনেকেই থাকবে আমাদের সঙ্গে। ৪ বছরে লাগবে ২৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা। এর যোগান দেওয়া সম্ভব।’’

ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘‘তবে নব্য রাজাকাররা রয়েছে। সর্তক থাকতে হবে। ’৫২ সালে আন্দোলন করে শহীদ মিনার পেয়েছি। ’৭১ সালে স্মৃতিসৌধ। আর এখন আন্দোলন করে নব্য রাজাকারদের হারিয়ে পদ্মাসেতু করতে হবে। এজন্য আমাদের ঘরে ঘরে সঞ্চয় গড়ে তুলতে হবে।’’

এএমএম শফিউল্লাহ বলেন, ‘‘পদ্মাসেতু করার মতো কারিগরি জ্ঞান আমাদের আছে। তবে নির্মাণ সক্ষমতা নেই। তাই আমাদের বিদেশ থেকে ঠিকাদার আনতে হবে। ভালো ব্যবস্থাপনা দরকার।’’

তিনি বলেন, ‘‘ঋণ চুক্তি বাতিল আমাদের জন্য সুযোগ। কারণ দাতাদের ঋণে নানা শর্ত থাকে।’’

শ্যামল দত্ত বলেন, ‘‘দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করেনি। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। আমাদের শঙ্কা তাতেই। ভয় আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিভক্তি নিয়ে। এর সুযোগ নেন বিদেশিরা।’’

তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন, ১৬ মার্কিন সিনেটরের বিবৃতি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সূত্রে গাঁথা। এখন আমরা বিষয়টি কিভাবে মোকাবিলা করবো, তা ভাবনার বিষয়।’’

শ্যামল দত্ত ড. ইউনূসের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘জাতির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলছেন না। এই কঠিন সময়ে তার কোনো ভূমিকা নেই। দেশের সংকটে কেন তার ভূমিকা নেই? অথচ দেশের বাইরে গিয়ে নানা কথা বলেন।’’

সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক এবং জাতীয় ঐক্য জরুরি বলেও মত দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের পক্ষে পদ্মাসেতু নির্মাণ এবং অর্থায়নে ১৩টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ