আফ্রিকার সিয়েরালিওনে কৃষিখাতে বিপুল বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের লালমাই ফুড। আরকু ব্র্যান্ডের প্রস্তুতকারক এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ হবে তিন কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেখানে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের গবেষণায় উদ্ভাবিত কৃষিপণ্য চাষ করবে। আর এ কাজে ব্যবহার করা হবে বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই।
আফ্রিকার অনেক দেশেই প্রচুর অনাবাদি জমি রয়েছে। দক্ষ জনবল ও লাগসই প্রযুক্তির অভাবে সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে না। এ কারণে কৃষিতে দক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে চাষাবাদের সুযোগ নিচ্ছে।
পাশাপাশি রাবার প্রক্রিয়াজতকরণ খাতে আরো ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে লালমাই ফুড। আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সে দেশের সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কৃষিখাতে বিনিয়োগ করবে।
এ প্রসঙ্গে লালমাই ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, “আফ্রিকার আছে জমি, আর আমাদের আছে অভিজ্ঞতা। সেখানে বিনিয়োগ করতে চাইলে টাকার প্রয়োজন নেই। সৎ মানসিকতা আর অভিজ্ঞতা থাকলেই সম্ভব। বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফ্রিকাসহ সারা পৃথিবীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুবই অল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। হল্যান্ড, কানাডা, চীনের বিভিন্ন কৃষি ফার্ম সেদেশে এরকম ডোনার ফান্ডের টাকা দিয়ে বিনিয়োগ করছে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা সেখানে কাজে লাগাতে পারলে তা সেদেশে আমাদের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে।”
লালমাই ফুডের কৃষিখাতে ব্যবসা করা ২১ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কৃষিখাতে ব্যবসায় নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য এরইমধ্যে তারা স্থানীয় চাষীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সিয়েরালিওনেও কৃষি খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তি চালু করতে পারবে বলে আশাবাদি প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেঙ্গল এগ্রো (এসএল) লিমিটেডের মাধ্যমে লালমাই ফুড সেদেশে বিনিয়োগ করবে। শতভাগ অর্গানিক খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে উন্নত জাতের আদা, হলুদ, ধান, ভুট্টা, চীনাবাদাম, তিল, রেডি ইত্যাদি। এছাড়াও আফ্রিকায় প্রচুর পরিমাণে যে রাবারের চাষ হয় তা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিপণনের কাজটিও করবে তারা।
এ ব্যাপারে আমিনুর রশীদ বলেন, “আফ্রিকাতে প্রচুর রাবার জন্মে। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করনের উপায় জানা না থাকায় সেগুলোর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া সেখানে প্রচুর আসল জাতের আদা জন্মে। এগুলোও একইভাবে সঠিক প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করলে ক্রেতা বাড়বে।”
পরিবেশের ক্ষতির কারণ দেখিয়ে সেখানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। এজন্য বাংলাদেশের নিম ও ধইঞ্চা গাছ সেখানকার জমিতে রোপন করে তা থেকে জৈব সার তৈরির মত ব্যবস্থাও সিয়েরালিওনে করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, সিয়েরালিওনে কৃষি খাদ্যপণ্যে অনেক দেশ বিনিয়োগ করলেও লালমাই গ্রুপই সর্বপ্রথম রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগ করছে। এই প্রক্রিয়াজতকরণ কারখানা পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতেও প্রথম উদ্যেগ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে এসব কারখানায় এক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে আমিনুর রশীদ আরো বলেন, “আমরা আশা করছি তিন বছরের মধ্যে চার হাজার ৪৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতে সমর্থ হবো। আর চার বছরের মধ্যে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবো।’
চাহিদা বাড়লে খাদ্যশস্যের চাষাবাদ বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।