স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) ত্রিবার্ষিক সভায় উন্নয়নশীল দেশে তালিকাভুক্ত করতে চূড়ান্ত সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে, জাতিসংঘের বিচারে চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুতির জন্য দুই বছর বাড়তি সময় দেওয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। ফলে আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে আর কোনো বাধা রইলো না।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে কোনো দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করে থাকে। বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান ও লাওস চূড়ান্তভাবে এলডিসি থেকে বের হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, ওষুধ খাতে সুবিধা, মেধাস্বত্ব সুবিধাসহ অন্য যেসব সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে বিনিয়োগকারী আকর্ষণ, ক্রেডিটরেটিংয়ে উন্নয়ন, বিশ্বদরবারে মর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা সুবিধাও পাওয়া যাবে।
সিডিপি তিনটি সূচকের মানের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। সূচকগুলো হচ্ছে- মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই প্রয়োজনীয় মান অর্জন করে। এ বছর পর্যালোচনার মানদআেন্তর্জাতিক পদ্ধতির হিসাবে গড় মাথাপিছু আয়ের প্রয়োজন এক হাজার ২২২ ডলার। গত বছর শেষে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা তার বেশি স্কোর থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ২০২০ সাল শেষে স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৩। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পয়েন্ট রয়েছে বাংলাদেশের। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা তার কম স্কোর থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্কোর ২৭ দশমিক ৩। তিনটি সূচকেই প্রয়োজনীয় সবকোর তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করায় আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।