মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় লাখো মানুষ

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় লাখো মানুষ

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদকারীরা সেনাবাহিনীর ‘ব্যবস্থা নেয়ার’ হুমকিকে উপেক্ষা করে সোমবার এ যাবতকালের অন্যতম বৃহৎ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে।

‘বিক্ষোভকারীরা তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে’- সেনাবাহিনীর এমন হুমকির পর সহিংসতার আশঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে প্রতিবাদ-সমাবেশ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদকারীরা। ওই দিনই অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাকে গৃহবন্দি করা হয়।

তার বিরুদ্ধে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা এবং দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল তাতে যোগ দিয়েছে সর্বস্তরের কর্মচারীরাও। বিক্ষোভকারীরা সামরিক শাসনের অবসান ও অং সান সুচিসহ এনএলডির অন্য আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করে।

‘আমরা জান্তা শাসন চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা নিজেরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই,’ ইয়াঙ্গনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলছিলেন একজন প্রতিবাদকারী।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে, যেখানে বলা হয়েছে বিক্ষোভকারীরা মানুষকে সহিংসতার দিকে উস্কে দিচ্ছে বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের যা তাদের জীবন হারানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এ বিবৃতিতে মানুষকে ‘দাঙ্গা ও নৈরাজ্যে’র বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

সর্বশেষ যা ঘটল
মিয়ানমারের প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ সমাবেশসহ যেখানে বিক্ষোভকারীরা পতাকা নাড়িয়ে জান্তাবিরোধী স্লোগান দেন। রাজধানী নেপিদোতে লাখো মানুষ সমাবেশে যোগ দেয় এবং পুলিশ অন্তত একশজনকে আটক করে।

গণধর্মঘট কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়েছিল ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও। ২২ ফেব্রুয়ারিতে হওয়ায় সোমবারের কর্মসূচি পরিচিত পেয়েছে ‘২২২২২ বিপ্লব’ হিসেবে।

আর এটিকে তুলনা করা হচ্ছে ৮ অগাস্ট ১৯৮৮ সালে হওয়া মিয়ানমারের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিক্ষোভ যেটি ‘৮৮৮৮ বিক্ষোভ’ হিসেবে পরিচিত।

‘আমরা প্রতিবাদে অংশ নিতে বেরিয়ে এসেছি, জয় না আসা পর্যন্ত লড়াই চলবে,’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছিলেন একজন প্রতিবাদকারী।

‘ক্র্যাকডাউন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, তবে আমরা এগিয়ে যাব,’ বলছিলেন তিনি।

থম্পসন চৌ, স্থানীয় গণমাধ্যম ফ্রন্টিয়ারের সম্পাদক, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে বলছিলেন যে এবারের প্রতিবাদকে তুলনামূলক বড় মনে হয়েছে তার কাছে এবং দোকানপাট বন্ধ রাখার পাশাপাশি এ সময় আরও বেশি সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে।

‘বড় ধর্মঘট হচ্ছে কারণ লোকজন কাজে যায়নি। দোকানপাটও বন্ধ,’ বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান, এমনকি সরকারি কোম্পানিতে যারা কাজ করেন তারা ছাড়াও সরকারি ডাক্তার ও প্রকৌশলীরাও ধর্মঘট পালন করেছে।

ওদিকে মিয়ানমারের উৎখাত হওয়া সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সামরিক নেতাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অবিলম্বে দমন পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়া, সহিংসতা বন্ধ করা, মানবাধিকারকে সম্মান করা এবং জনগণের ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আধুনিক বিশ্বে সামরিক অভ্যুত্থানের জায়গা নেই।’

মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ ও অন্য কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে তারাও মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছে।
খবর বিবিসির

আন্তর্জাতিক শীর্ষ খবর