মানুষ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হবে— এ কথা আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা ভেবেছিল দুর্নীতির কথা বলে আমাদের গায়ে কালিমা লেপন করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে, তাদের সে ভাবনা যে কতটা ভুল ছিল সেটা প্রমাণ হয়েছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। ফোন এবং ই-মেইল থেকেই সেটা বোঝা যায়। জনগণের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ যেন আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে।”
বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যদি অপরাধ করতাম, সেটা মানুষ জানতে পারত। কারণ মানুষের কাছে সব তথ্যই চলে যায়, কোনেকিছুই আর গোপন থাকে না। আমরা নিজস্ব টাকাতেই পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব। আমরা ক্ষমতায় এসে দশ হাজার বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়িয়েছি। সেখান থেকে এক হাজার বিলিয়ন খরচ করা ব্যাপারই না।”
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিএনপি আজ দুর্নীতির কথা বলছে। কিন্তু তাদের জানা থাকা উচিত, বিশ্বব্যাংকের টাকা বিএনপির সময়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ৭টি প্রকল্পের টাকা বিশ্বব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি দুর্নীতি ছাড়া কোনো কিছু ভাবতে পারে না। কারণ তারা ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি আর লুটপাট ছাড়া অন্য কিছু করেনি। যারা চোর, তারা সবাইকে চোরই বলে। চুরি-দুর্নীতি ছাড়াও যে কাজ করা যায়, এটা বিএনপির লোকেরা ভাবতেই পারে না।”
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশে বলেন, “আমরা পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করতে চাইলে তারা টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি টাকাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অথচ বলা নেই কওয়া নেই দুর্নীতির অভিযোগের কথা বলে টাকা বন্ধ করে দিল। টাকাই ছাড় হলো না সেখানে দুর্নীতি হলো কিভাবে। কার খাতিরে তারা এই ঋণ বাতিল করলো তা জানি না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “ফোন এবং ই-মেইলের মাধ্যমে এতো সাড়া পাচ্ছি যে মনে হচ্ছে মানুষ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমরা তো ভিক্ষা চাই না, আমরা ঋণ চাই। সুদসহ সেই ঋণ শোধ করবো। কারো কাছে হাত পাতবো না। বাংলার মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। কারো কাছে তারা মাথা নত করবে না।”
পদ্মা সেতুর দুনীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “এটা কখনো গ্রহনযোগ্য নয়। যে অপরাধ আমি করিনি, সে অপবাদ কোনোদিন মেনে নেবো না। পদ্মাসেতু প্রকল্পের সম্ভাবতা যাচাইয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ সময় তো এক পয়সাও দুর্নীতি হয়নি। বিশ্বব্যাংক এক টাকা ছাড় করলো না অথচ দুর্নীতির কথা বলছে। দুনীতি হলো কিভাবে।”
তিনি বলেন, “আমরা নিজেদের দিয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবো। আমরা কারো কাছে টাকা চাইবো না। কেউ যদি দিতে চায়, তখন চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।”
দুনীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “ক্ষমতায় তো আমরা নতুন না। ১৯৫৪ সালে আমরা আব্বা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তারপর প্রধানমন্ত্রী। আমি আগেও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। জনগণের সেবা করার জন্য আমরা রাজনীতি করি।”
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করেছে। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন। আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে সমন্বয় করে সেই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকেই স্বেচ্ছোসেবক লীগ নাম দিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। জনগণের সেবা করতে হবে। নামের যথার্থতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোল্লা আবু কাওছারের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের চত্বরে বিশাল প্যান্ডেলের নিচে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সংগঠনের নেতাকর্মী ডেলিগেটস ছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।