জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ অতিমারি সমাজের সবস্তরকেই নাড়া দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বে বর্ণবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ, বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যসহ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ‘কেউ পিছে পড়ে থাকবে না’- এ লক্ষ্য অর্জনে কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলার বিষয়টিকে অবশ্যই সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ফ্রেব্রুয়ারি) ‘বিদ্যমান অসমতা : এসডিজি’র কার্য-দশকে সকলের জন্য বর্ণবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্য দূরীকরণ’ শীর্ষক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) উচ্চ পর্যায়ের এক বিশেষ সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত সংকটে সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে অভিবাসী শ্রমিকগণ। এটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান অসমতা ও বৈষ্যমেরই প্রকাশ। পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।’
সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বাংলাদেশে কোভিড-১৯ নিয়ে পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন, যেখানে সমাজের সবচেয়ে নাজুক অংশকে পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৩.৭ ভাগের সমান ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার বাইরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে- যেখানে নারী, অতিদারিদ্র্য, ভ্রাম্যমান জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য দূর্দশাপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদ ও অন্যান্য বৈষম্য মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে ন্যায়সঙ্গত ও সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিনিয়োগ করতে হবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। আর এই বিনিয়োগের শুরু হতে পারে জাতি, মর্যাদা বা জাতীয়তা নির্বিশেষে সকলের জন্য কোভিড ভ্যাকসিনগুলোর সার্বজনীন প্রাপ্যতার সুযোগ তৈরি করার মধ্য দিয়ে।
সব অংশীজনের আন্তরিক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দারিদ্র্য, সহিংসতা, বৈষম্য, বর্জন এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাবসহ অসমতার মূল কারণগুলো সমাধান করার আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন, যা সুযোগ ও সম্ভাবনা এনে দেয় এবং বর্ণবাদের দুষ্টু চক্র ভাঙতে মানুষকে সহায়তা করে। কোভিড-১৯ এর সময়ে ডিজিটাল সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার কারণে অনেক শিশুর পড়াশুনা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সকলকে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ব্যতিত বর্ণবাদের মতো সামাজিক কূফলগুলো নির্মূল করা সম্ভব নয় কারণ এগুলো সমাজের গভীরে প্রোথিত।’
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভিত্তিমূলে প্রতিষ্ঠিত- এমন একটি নতুন সামাজিক চুক্তি তৈরিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানের সঙ্গে একাত্ত্বতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের বহুমাত্রিক ধরণ নির্মূলে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে হবে।’
ইভেন্টটির আয়োজন করে ইকোসক। এতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।