বিপিএল বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র। গলার ফাঁস হয়ে গেছে বিপিএল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফিকা) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম মে বিসিবির কর্মকর্তাদের গলায় দড়ি পড়াতে চেষ্টা করেছেন।
একমাস আগে ফিকা সিইও এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ১২ জন বিদেশি ক্রিকেটার ৬ লাখ ডলার পাবে সংশ্লিষ্ট ফ্রেঞ্চাইজিদের কাছ থেকে। জুনে ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পরিশোধ করার পরেও টিম মে বলছেন, এখনও ৬ লাখ ডলার বকেয়া আছে!
এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে ফিকা সিইও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়রা তাদের চুক্তির ৬০ শতাংশ টাকাও পায়নি। টিম মে এক বিবৃতিতে বলেন,‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং তার সভাপতি মোস্তফা কামাল অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছেন। তিনি আসলে লোক দেখানো প্রতিশ্রুতি দেন। হয় বিপিএল ফ্রেঞ্চাইজি এবং বিসিবি টাকা দিতে অক্ষম, নয়তো তাদের অনীহা আছে।’
বিপিএলের যে সকল খেলোয়াড় তাদের চুক্তির পুরো টাকা পায়নি তাদেরকে নিয়ে মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফিকা সিইও,‘এই মুহূর্তে খেলোয়াড়দের স্বার্থরক্ষায় বিসিবি এবং ফ্রেঞ্চাইজিদের বিরুদ্ধে মামলায় যাওয়া ছাড়া কোন পথ খোলা নেই আমাদের সামনে।’
বিপিএল এবং বিসিবি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে মনে করেন টিম মে,‘যে প্রক্রিয়ায় সম্মানী দিচ্ছে খেলোয়াড়দের তা হাস্যকর। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হয়েও অপেশাদার আচরণ করছে।’
ফিকা প্রধান দূর থেকে বড় গলায় যা বলছেন তা ভিত্তিহীন হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে কোন ধরণের অভিযোগ না উঠায়। বিদেশি কোন ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত বিসিবির কাছে কোন ধরণের অভিযোগ করেনি। ফলে ফিকার সিইও’র বক্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি মোবাইলফোনে বলেছেন,‘কোন খোঁজখবর না নিয়ে মুখস্ত বুলি আওড়ে যাচ্ছেন টিম মে। তার জানা থাকা উচিৎ ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। তিনি হয়তো জানেন না, বিসিবি থেকে আইসিসির গত সভায় প্রত্যেক দেশের ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি এবং আইসিসিকে লিখিত ডকুমেন্ট দিয়েছে। কোন ক্রিকেটার যদি তার দেশের বোর্ডের কাছে অভিযোগ করে বিপিএল থেকে সম্মানী পায়নি। তাহলে ওই দেশের বোর্ডের মাধ্যমে আমরা টাকা পরিশোধ করে দেবো। আইসিসি এবং প্রত্যেক বোর্ডকে লিখিত ভাবে টিম মে’র আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। টিম মে ইংল্যান্ডের সিনিয়র আইনজীবী ইয়ান স্মিথকে নিয়োগ দিয়েছিলো। তাকে আমরা সব তথ্য দেওয়ার পর সে খুশি। আসলে আমাদের এখান থেকে কোয়াবের উসকানিতে বাড়াবাড়ি করছে ফিকা।’
তবে বিপিএলের বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা চুক্তির অর্ধেক টাকাও পায়নি। বিপিএলের টাকার জন্য ক্রিকেটারদের প্রায়ই হাহুতাশ করতে দেখা যায়। অনেকে বকেয়া টাকার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন। ধরেই নিয়েছেন ফ্রেঞ্চাইজিগুলো তাদেরকে বকেয়া টাকা দেবে না।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেন খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের মালিক ওরিয়ন গ্রুপের কাছে এখনও এক কোটি সাত লাখ টাকা পাবেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কেউ ফোন ধরে না। অনেককে চেক দিলেও ব্যাংকে গিয়ে তা ভাঙ্গানো যাচ্ছে না। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব স্বীকার করেছেন স্থানীয়দের সম্মানী পরিশোধ করতে বিলম্ব হচ্ছে,‘স্থানীয়দের টাকা দিতে শুরু করেছে ফ্রেঞ্চাইজিগুলো। আশা করি শিগগিরই টাকা পেয়ে যাবে।’
এদিকে বেশ কয়েকটি ফ্রেঞ্চাইজি আর্থিক অনটনে আছে। দূরন্ত রাজশাহী মালিকানা হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে। বিসিবির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী তাদের বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন কূলকিনারা করতে পারেনি। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসেরও একই অবস্থা। তারাও শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছে। শখে শখে ক্রিকেট ব্যবসা করতে এসে অনেকেই লেজ গুটিয়ে পালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এত কিছুর পরেও বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের সময় ঠিক করে ফেলেছে বিসিবি। আগামী বছর মধ্য জানুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি করতে চায় বোর্ড।