স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গ্রাম টেলিমিডিয়ার যৌথ আয়োজনে নৃত্য প্রতিযোগিতা ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’। বর্তমানে এই রিয়েলিটি শো’টির প্রচার বন্ধ রয়েছে। আগামীতে আবার প্রতিযোগিতা শুরু হবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পীদের আলোকিত প্লাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’। গতবছরের শেষে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অডিশন রাউন্ডের পর চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে বাংলাভিশনে প্রচার শুরু হয় নৃত্য বিষয়ক এই রিয়েলিটি শোটি।
এতে প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করছিলেন নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ, অভিনেতা ফেরদৌস, মডেল-নৃত্যশিল্পী ফারজানা রিয়া চৌধুরী। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় বাংলাভিশনে প্রতি ২৪টি পর্ব প্রচারের পর সাড়া জাগানো এই রিয়েলিটি শোটি বন্ধ হয়ে। নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ তিন বিচার ও প্রতিযোগীরাা। এ বিষয়ে অভিযোগ, অনুষ্ঠানটির নির্মাতা শাহানূর খান রিপনের অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণেই মূলত ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’ বন্ধ রয়েছে।
বেশ জমকালো আয়োজনে শুরু হয়েছিল ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’ প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানটির তিনটি রাউন্ড নির্মাণ ও প্রচার শেষ হয়েছে। চতুর্থ রাউন্ড শুরুর মুহূর্তেই নির্মাণ বন্ধ করে দেন নির্মাতা। অভিযোগ রয়েছে, অনুষ্ঠানটির মূল স্পন্সর ম্যাঙ্গোলি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান এএসটি বেভারেজ লিমিটেডের কাছ থেকে নির্মাতা অনুষ্ঠান নির্মাণের পুরো টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এমনকি বিচারকদের পারিশ্রমিকও দেননি। শুটিংও করছেন না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাভিশনের প্রোগাম হেড শামীম শাহেদ বলেন, ‘জনপ্রিয়তা পাওয়া এই রিয়েলিটি শোর ২৪টি পর্ব নির্মাণের পর হঠাৎ করেই অনুষ্ঠান সরবরাহ ও নির্মাণ বন্ধ করে দেন নির্মাতা। পাশাপাশি নির্মাতার বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম, কারচুপি আর লুটপাটের অভিযোগ উঠে। স্পনসর আর কো-স্পনসরদের কাছ থেকে পুরো টাকা উত্তোলনের পরও নির্মাতা বিভিন্ন খাতে টাকা-পায়সা পরিশোধ করেন নি। নির্মাতাকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করছেন না’।
শামীম শাহেদ আরো বলেন, বাংলাভিশন বা প্রতিযোগিতা সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে নির্মাতা যোগাযোগ রাখেন নি। এদিকে প্রতিযোগীসহ অনেকেই আমাদের কাছে ‘নাচো বাংলাদেশ নাচো’-এর বন্ধের কারণ আর ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাইছে। সবমিলিয়ে বেশ চাপের মধ্যে পড়ে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠান প্রচার আবার শুরু হবে কিনা জানতে চাই শামীম শাহেদ জানেন, অনুষ্ঠানটির অন্যতাম আয়োজক হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি স্পন্সর ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বসার এবং অনুষ্ঠানটি প্রচারের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে পৌছার।
‘নাচো বাংলাদেশ নাচো’-এর অন্যতম প্রধান বিচারক শিবলী মোহাম্মদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আমার প্রথম দুই কিস্তির টাকা দেওয়ার পরই নির্মাতা শাহানূর খান রিপন আমার পারিশ্রমিক পরিশোধ নিয়ে গড়িমসি শুরু করে। আমার জানা মতে. প্রতিযোগিতার অন্য দুই প্রধান বিচারকের পারিশ্রমিকও চুক্তি অনুযায়ী নির্মাতা পরিশোধ করেন নি।
শিবলী মোহাম্মদ আরো বলেন, তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, স্পনসরদের কাছ থেকে নির্মাতা এরই মধ্যে আমার পারিশ্রমিক বাবদ পুরো টাকা উত্তোলন করেছে। আমি তার এই কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আমার পারিশ্রমিকের টাকা পরিশোধের দাবি জানালে নির্মাতা রিপন আমার সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
তিনি আরো বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি জমে উঠেছিল। আমরা কিছু ভালো প্রতিযোগীও পেয়েছিলাম। আমরা আন্তরিক, চ্যানেল আন্তরিক, স্পন্সররাও আন্তরিক- তবুও নির্মাতার লুটপাট আর দূনীর্তির কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে। এতোগুলো প্রতিযোগীর স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস নির্মাতা কোথায় পেল আমি জানি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই আমার চালু হোক ‘নাচো বাংলাদেশ নাচো’।
‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’র স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এএসটি বেভারেজ লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক খায়রুল আনাম বলেন, ‘আমরা স্পনসর বাবদ সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। বার বার যোগাযোগ করার পরও তার কাজ এগিয়ে নিতে গড়িমসি করছে। আগের মতো কোনো আন্তরিকতাও পাচ্ছি না।
লুটপাট ও দূর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করে অনুষ্ঠানটির নির্মাতা শাহানূর খান রিপনের সঙ্গে। তিনি পুরো অভিযোগকে বানোয়াট আর ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। নির্মাতা বলেন, সামনে রোজার মাস। আমাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এ মাসে নাচের অনুষ্ঠান প্রচার সম্ভব নয়। তাই ঈদ পর্যন্ত ‘নাচো বাংলাদেশ নাচো’ নির্মাণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে স্পনসরদেরও জানিয়েছি। ঈদের পর আবার পুরোদমে এ অনুষ্ঠানের কাজ শুরু করবো।
চুক্তি অনুযায়ী বিচারকদের পারিশ্রমিক পরিশোধ না করা প্রসঙ্গে শাহানূর খান রিপনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কিস্তিতে পারিশ্রমিক আমি পরিশোধ করেছি। বরং প্রধান বিচারকদের একজন শিবলী মোহাম্মদ চুক্তির বরখেলাপ করে এককালীন পুরো টাকা দাবী করে বসেন। তার দাবী মেটাতে না পারায় তিনি শুটিংয়ে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং অনুষ্ঠানটি নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি করেন।
স্পনসরদের কাছ থেকে অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ টাকা বাবদ প্রায় কোটি টাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে শাহানূর খান রিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, মুখে মুখে তো
অনেক কথাই বলা যায়, কেউ প্রমাণ দেখাতে পারবেন না। আসলে ব্যাপক পরিসরের এই আয়োজনটিতে স্পনসরের পাশাপাশি কয়েকটি কো-স্পনসর রয়েছে। কো-স্পনসরের কারো কাছ থেকেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতাশিত অর্থ এখন পর্যন্ত পাই নি। তবে স্পনসর আর কো-স্পনসররা আমাকে আশ্বাস দিয়েছে, ঈদের পর কাজ শুরু করলে তারা চুক্তি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেবেন।
স্পনসরদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা তুলে সেই টাকায় তার জায়গা-জামি কেনার অভিযোগ তুলে ধরলে নির্মাতা শাহানূর খান রিপন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, কোথায় সেই জায়গা? কেউ যদি দেখাতে পারে, তবে যে কোনো শাস্তি আমি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। বরং এই রিয়েলিটি শো করতে গিয়ে আমাকে ঋণগ্রস্থ হয়েছে। স্পনসররা চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দর্শকরা ‘নাচো বাংলাদেশ নাচো’ অনুষ্ঠানটি পছন্দ করেছে। ঈদের পর আবার অনুষ্ঠানটির কাজ শুরু করার মনোবল আমার আছে।