করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে শুরু হয়েছে নতুন কর্মযজ্ঞ। বাস্তবায়ন করা হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি, যা গত ২৭ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার রাজধানীর বাইরেও দেশে বিভিন্ন জেলায় সম্প্রসারণ করা হচ্ছে এই কর্মসূচি।
নাটোর: শুক্রবার ভোরে বিশেষ ব্যবস্থায় ৪৮ হাজার টিকাবাহী গাড়ি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছে। টিকাগুলো পরে বিশেষ ব্যবস্থায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সংরক্ষণাগারে নিয়ে রাখা হয়।
নাটেরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোর জেলার তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের টিকা প্রদান করা হবে।
ফরিদপুর: সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বেক্সিমকো ফার্মার একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কার্ভাড ভ্যান করোনাভাইরাস প্রতিরোধক টিকা নিয়ে শহরের জেনারেল হাসপাতালে এসে পৌঁছালে সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দীকুর রহমান সেটি গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ৬০ হাজার ডোজ টিকা সকালে আমরা গ্রহণ করেছি। জেলা ও উপজেলায় টিকা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় একটি, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি ও সদর হাসপাতালে একটিসহ মোট ১৩টি কেন্দ্র থেকে টিকা প্রদান করা হবে।’
কুষ্টিয়া: সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্ব প্রথম কুষ্টিয়া জেলায় করোনাভাইরাসের টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম টিকাগুলো বুঝে নেন।
তিনি বলেন, ‘খুলনা বিভাগে প্রথম জেলা হিসেবে কুষ্টিয়া জেলা টিকা গ্রহণ করল। প্রথম চালানে যে টিকা পাওয়া গেছে তাতে ৩০ হাজার মানুষকে দেয়া যাবে।’
একই দিনে মেহেরপুরসহ আরও পাঁচটি জেলায় এই টিকা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
চুয়াডাঙ্গা: সকালে টিকাবাহী গাড়ি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান।
তিনি বলেন, ‘জেলার জন্য প্রথম ধাপে ৩৬ হাজার ডোজ করোনার টিকা হাতে পাওয়া গেছে। এই টিকা জেলা সদরসহ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হবে। জেলার চার উপজেলাতেই টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এতে ৫০টি টিম কাজ করবে।’
বরিশাল: প্রথম পর্যায়ের এই বিভাগে তিন লাখ করোনার টিকা এসে পৌঁছেছে। সকালে ঢাকা থেকে আসা টিকার চালান গ্রহণ করেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
তিনি জানান, আশা করা যায় বরিশাল বিভাগে ৭-৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা যাবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৫ শ্রেণির মানুষের মাঝে টিকা বণ্টন করা হবে।
মেহেরপুর: বেক্সিমকোর ডেপুটি ম্যানেজার কামরুল হাসানের নেতৃত্বে সকাল ৯টার দিকে প্রথম দফার এক কার্টুন কোভিড-১৯ টিকা মেহেরপুরে এসে পৌঁছায়। এগুলো গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে টিকা দেয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার ৪ হাজার ৮০০ ডোজ ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। শুক্রবার দুপুর ২টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে প্রথম পর্যায়ের এসব টিকা এসে পৌঁছায়।
এ সময় জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী এসব টিকা বুঝে নেন। পরে সেগুলো ই.পি.আই স্টোরের বিশেষ ফ্রিজে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
এ সময় সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ‘করোনার টিকা প্রদানে সব ধরনের ব্যবস্থা এরই মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গ্রহণ করেছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি জেলায় করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।’
শেরপুর: শেরপুরে প্রথম ধাপে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। বেক্সিমকো ফার্মার একটি বিশেষায়িত ফ্রিজার ভ্যানে এসব টিকা এসে পৌঁছালে সিভিল সার্জন ডা. আবুল কাশেম মোহাম্মদ আনওয়ারুর রউফ এসব টিকা গ্রহণ করেন। পরে টিকাগুলো সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই টিকাদান কর্মসূচির বিশেষায়িত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলায় ৪০ হাজার ডোজ টিকার চাহিদা থাকলেও প্রথম ধাপে মিলেছে ৩৬ হাজার ডোজ। আগামী ৭ ফেব্রয়ারি থেকে জেলায় প্রথম ডোজ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। এজন্য অভিজ্ঞ নার্স ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে জেলা সদরে ১০টি এবং ৪ উপজেলার প্রতিটিতে ২টি করে টিকাদান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রতিটি টিমকে সহযোগিতার জন্য থাকছেন ৪ জন করে মোট ৭২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক। টিকাদানের জন্য জেলা হাসপাতাল এবং নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা টিকাদান বুথ করা হয়েছে। সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিরা টিকা পাবেন। করোনা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক এদের করোনার টিকা দেয়া হবে।
বগুড়া: বগুড়ায় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় প্রথম চালানের ১ লাখ ৮ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে।
শুক্রবার সকাল ১০টায় করোনার টিকা বগুড়ায় পৌঁছার পর জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা এগুলো গ্রহণ করেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি টিকা প্রদান শুরু হবে।
জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফিজুর রহমান তুহিন জানান, বগুড়ায় সকাল ১০টায় টিকা এসেছে। মোট টিকা আসছে ১০ হাজার ৮০০ ভায়াল। এ পরিমান দিয়ে ১ম ও ২য় ডোজ মিলিয়ে ৫৪ হাজার নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া যাবে। টিকাগুলো জেলা ইপিআই স্টোরে মজুদ করে রাখা হয়েছে। সেই সাথে নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
তিনি বলেন, বগুড়ায় টিকা দিতে জেলা সদরের তিনটি হাসপাতালসহ উপজেলার ১২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের টিকা দেয়া হবে। যারা টিকা পাচ্ছেন তাদের কে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল, বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সকল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই টিকা দেয়া হবে।
ঝালকাঠি: জেলায় শুক্রবার বেলা ২টায় পুলিশ পাহারায় করোনার ভ্যাকসিন এসেছে এবং ইপিআই ভবনে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।