নিজেদের জীবনকে অসমাপ্ত বললেন হাসিনা-রেহানা

নিজেদের জীবনকে অসমাপ্ত বললেন হাসিনা-রেহানা

বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত দু’বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এ সময় তারা নিজেদের জীবনকে অসমাপ্ত বলে উল্লেখ করেন।

সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘ অসমাপ্ত আত্মজীবনী-শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ সময় সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশের।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমাদের দু’বোনের জীবনটাই অসমাপ্ত। ধর্মে আছে কারোর বাবা-মা, ভাই-বোন মারা গেলে কবর দেওয়ার আগে মুখ দেখানো হয়, দোয়া-দরুদ পড়তে দেওয়া হয়, আমরা দু’বোন সেই সুযোগটাও পাইনি। আর এ জন্য যতদিন বেঁচে থাকবো আমাদের জীবনটা অসমাপ্তই থেকে যাবে।”

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আসন থেকে উঠে এসে জড়িয়ে ধরেন ছোট বোন শেখ রেহানাকে। উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের মধ্যেও অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বক্তব্যে বলেন, “বঙ্গবন্ধু আমাদের বাবা এটা ঠিক। কিন্তু তিনি তো শুধু আমাদের নন, ছিলেন জনগণের। তার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী জনগণের সম্পদ। তাই জনগণের সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি এটা আমাদের বড় স্বার্থকতা।”

তিনি আরও বলেন, “বাবার নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির ৪টি খাতা যখন হাতে পেলাম, তখন মনে হলো কি পরম সম্পদ পেয়েছি। পাণ্ডুলিপিটি যখন প্রকাশের জন্য মহিউদ্দীন সাহেবের হাতে তুলে দেই, তখন মনে হয়েছে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদ যেন তুলে দিলাম।”

তিনি বলেন. “পাণ্ডুলিপিতে বার বার হাত বুলাতাম। এ সময় যেন বাবার পরশ পেতাম। আমি সবাইকে এই বইটি পড়ার আহ্বান জানাই। কারণ একজন মানুষ একটি দেশ, জাতি ও স্বাধীনতার জন্য যে কতটা আত্মত্যাগ করতে পারে, এ বইটি পড়লেই সবাই তা বুঝতে পারবে।’’

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, স্মৃতির পাতা থেকে এবং চীন ভ্রমণ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা ডাইরিগুলোও আগামীতে পর্যায়ক্রমে বই আকারে প্রকাশ করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার মা বঙ্গবন্ধুকে ডাইরি লেখার জন্য আগ্রহী করে তুলতেন। জেলখানায় খাতা দিয়ে আসতেন, আবার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন, তখন খাতা নিয়ে এসেছে কিনা খবর নিতেন। কিন্তু আজ তা বই আকারে প্রকাশিত হলেও মা দেখে যেতে পারলেন না।”

শেখ রেহানা বলেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে অশ্রু-বেদনা ছাড়া আমাদের আর কিছুই ছিল না। দেশেও ফিরতে পারছিলাম না। একদিনে বাবা-মা, ভাইসহ সব হারানোর বেদনা সহ্য করার মতো অবস্থা আমাদের ছিলো না। আমি আর আপা দু’বোন নিজেদের জড়িয়ে কেঁদেছি। আমাদের স্বপ্ন একটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা আর জনগণের কল্যাণে কাজ করা। ”

তিনি আরও বলেন, “জন্ম থেকেই দেখে এসেছি বেশিরভাগ সময়ই বাবা জেলে। জেলে বসেই বাবা অনেক কিছু লিখতেন। আর আমার মা অত্যন্ত যত্ন সহকারে রেখে দিতেন। তার নিজ হাতে লেখা একদিন ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল হবে তা আগে বুঝতে পারিনি। এই বইটি জনগণের মাঝে প্রকাশ করতে পেরে নিজেদেরকে স্বার্থক মনে করছি।”

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঐতিহাসিক এই বইটি প্রকাশে সহায়তার জন্য মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই নিজ নিজ আসন থেকে দাঁড়িয়ে এক মিনিট হাততালি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বইটির প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের(ইউপিএল) কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ছাড়াও একইসঙ্গে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা একাধিক কপি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।

শেখ হাসিনা বইটির প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বিশেষ করে তিনি সাংবাদিক বেবী মওদুদ এমপি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বেবী মওদুদই এ বইটি প্রকাশের পেছনে বেশি সময় শ্রম দিয়েছেন।”

বাংলাদেশ