ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না থাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরের ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন ফের পিছিয়েছে।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের কথা ছিল। নিজামী অন্য মামলায় চট্টগ্রাম থাকায় আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন জানান। চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ১৫ জুলাই তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে ২২ জুলাই আসামিপক্ষকে তাদের সাক্ষী তালিকা ও তথ্য-প্রমাণ সম্বলিত কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে আসামিপক্ষ বার বার এ বিষয়ে সময় পেছানোর আবেদন করায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-১ রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরের ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ১ জুলাই। কিন্তু অন্য মামলার কার্যক্রম থাকায় সেদিন ও পরে ৮ জুলাইও এ তারিখ পেছানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ এনে নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয় ২৮ মে। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছর মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে একই বছরের ২ আগস্টে ৫ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত ১১ ডিসেম্বর মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, খুন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
এ বিষয়ে প্রসিকিউশন ৩৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। আর আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়।
গত ৯ জানুয়ারি নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এতে মোট ১৫টি অভিযোগ ছিল। অভিযোগ গঠনকালে বুদ্ধিজীবী হত্যা যোগ হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করার পর গ্রেফতারকৃত ৯ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এ নিয়ে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
দু’টি ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে নিজামী ছাড়াও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গোলাম আযম, সাঈদী, কাদের মোল্লা ও সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একমাত্র বিএনপি নেতা আবদুল আলীম শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকলেও অন্যরা কারাগারে আটক আছেন।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত জামায়াতের কর্মপরিষদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গত ৫ জুলাই তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ১২ আগস্ট তদন্ত সংস্থার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের কথা রয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতের সাবেক রোকন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি পালিয়ে দেশত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে এবং তদন্ত সংস্থা অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে।