সাইফুল ইসলাম ১৫ বছর আগের একটি ব্লেজার গায়ে জড়িয়ে। এত বছর পরেও বেশ ফিট করেছে ব্লেজারটি। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু রূপসী বাংলা হোটেলের উইন্টার গার্ডেনে ঢোকার পর ব্লেজারটি খুলে রেখেছেন। একটু আঁটসাঁট হয় দেখে গায়ে জড়তা লজ্জা পাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৫ বছর আগের ওই ব্লেজারের জন্য তার খুব মায়া। আইসিসি ট্রফি জয়ী দলের ম্যানেজার হিসেবে ওটা পেয়েছিলেন লিপু। খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম।
১৯৯৭ সালে মালেয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনন্য ইতিহাস গড়ে ছিলেন আকারাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ রফিকসহ ১৬ জন ক্রিকেটার। তাদের হাত ধরে ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলো বাংলাদেশ। আজকের ক্রিকেটের ভিত তৈরি হয়েছিলো আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে।
১৬ জন ক্রিকেট বীর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর বীরোচিত সম্বর্ধনা পেয়েছিলেন। সরকার প্রধান থেকে গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন প্রত্যেকে। নাগরিক সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়েছিলো। সবাই নিজের জেলায় সম্মানিত হয়েছিলেন। আইসিসি ট্রফি জয়ী দলের সকল সদস্যকে সম্মাননা এবং সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য সোমবার এক বণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাঁকজমপূর্ণ অনুষ্ঠানে কে ছিলেন না বীর দেখার জন্য।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে এসে ওই দলের সদস্যরা স্মৃতিকাতর হয়ে গেলেন। জাভেদ ওমর বেলিম আইসিসি ট্রফি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন, কিন্তু খেলেননি। বদলি হিসেবে ফিল্ডিং করতে নেমেছিলেন। তাই বলে জাভেদের অবদান কম মনে করবেন না। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু তাদের গোল্লা সম্পর্কে বলছিলেন,‘ওই সাফল্যের পেছনে আমার প্রস্তুতি ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিন মাস ধরে সব দিক থেকে আমরা তৈরি হতে চেষ্টা করি। খুলনা থেকে দু’জন মেয়ে কার্ডে প্রত্যেক ক্রিকেটারকে উজ্জীবিত হওয়ার মতো কথা লিখে পাঠাতো। গোল্লা একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান করেছে। খেলতে যাওয়ার পর মালয়েশিয়ায় সব সময় দলকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছে সে।’
এখনও লিপুর চোখে ভেসে ওঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার দৃশ্য। দর্শকদের চেষ্টায় ভেজা মাঠ খেলার উপযোগী করে তোলা। আরও কত কত স্মৃতি ভির করে ম্যানেজারের মাথায়।
জাভেদ ওমর অনেকগুলো ঘটনা তুলে ধরেন, ‘জানেন আমাদের দলে কোন ভেদাভেদ ছিলো না। আমরা সবাই একটা পরিবার ছিলাম। এক এবং অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে খেলেছি।’
সাংবাদিক উৎপল শুভ্র একটি ঘটনা মনে করিয়ে দিলেন লিপুকে। ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করতে ভিন্ন ভিন্ন হাতের লেখায় একটি চিঠি লিখিয়ে নিয়েছিলেন ম্যানেজার। যাতে ছিলো দেশপ্রেমের মন্ত্র। স্বাধীনতার পর জাতির জন্য গর্ব করার মতো কোন কিছু নেই। আপনারা আইসিসি ট্রফি জিতলে এটা হবে গর্ব করার মতো আরেকটি অর্জন।
বাংলাদেশের সেই দলটি জিতেছিলো। তাদের দেখিয়ে দেওয়া পথে হাটতে হাটতে এগিয়েছে দেশের ক্রিকেট। একদিন হয়তো বিশ্বকাপও জিতবে।