যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে প্রথম এই ফোনালাপে জো বাইডেন মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সেই ফোনালাপে রাশিয়ায় চলমান পুতিনবিরোধী বিদ্রোহ এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যকার একমাত্র অবশিষ্ট পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তির বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের। মস্কোর এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পুতিন।
দু’পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর ছিলেন না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে।
এর আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যার অধীনে জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিও রাশিয়ার বিষয়ে কিছুটা দুর্বল ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ক্রাইমিয়ার সংযুক্তি, পূর্ব ইউক্রেনে আক্রমণ এবং সিরিয়ার ওপর জোর প্রয়োগ করার ইস্যুগুলোতে ক্রেমলিনের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ না থাকার অভিযোগ তোলা হয় ওবামা প্রশাসনের ওপর।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিষ্কার করেছেন, রাশিয়ার যেসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে বা তার মিত্রদের ক্ষতি করে, সেসব পদক্ষেপের বিপক্ষে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত পদক্ষেপ নেবে।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালের ফোনালাপ সম্পর্কে হোয়াইট হাউস বিবৃতির মাধ্যমে বলেছে, দুই প্রেসিডেন্ট ‘সোলার উইন্ডস’ সাইবার হামলা, অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন।
তবে ফোনালাপ বিষয়ে ক্রেমলিনের বিবৃতিতে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যকার উষ্ণ কথাবার্তার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে তা দু’দেশের জন্যই ভালো এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সহায়ক হবে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই নেতার মধ্যে আলোচনা অনেকটা ব্যবসায়িক এবং খোলামেলা ধাঁচের ছিল। দুই নেতা ওবামার সময়ে করা ‘নিউ স্টার্ট’ নামের একটি চুক্তি নতুন করে নবায়ন করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগারে মিসাইল, লঞ্চার এবং ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা সীমিত করার বিষয়ে ছিল ওই চুক্তি।
আগামী মাসেই এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আর ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। জো বাইডেন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যতটুকু শক্ত ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর, তিনি তার চেয়ে বেশি কঠোর থাকবেন।
দুই নেতার ফোনালাপ সংক্রান্ত খবরে বলা হচ্ছে, রাশিয়া যে ২০২০ ও ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে বাইডেন এই বিষয়টি জানেন বলে পুতিনকে বলেছেন। এছাড়া সাইবার ষড়যন্ত্র বা কোনো ধরণের আক্রমণ প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলেও পুতিনকে জানিয়েছেন তিনি।
জো বাইডেন এবং তার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দল ইউরোপ সম্পর্কে পুতিনের অভিসন্ধি এবং মানবাধিকার ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেবে। তবে তারা কোনো ধরণের দ্বন্দ্ব চায় না। বরং তারা সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখার মনোভাব জ্ঞাপন করেছেন।