বিগ ব্যানারের ছবি যখন, তখন ফর্মুলা বর্জিত হবে এমনটা আশা করা কাঁঠালের আমসত্ত্ব চাওয়ার মতো। তবুও বলতে হচ্ছে সুরিন্দর ফিল্মসের নতুন ছবি ‘তুমি আসবে বলে’ কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম। ফর্মুলার মধ্যে বিচরণ করেও অ্যাকশন ধামাকা অনেকটাই এড়াতে পেরেছেন পরিচালক সুজিত মণ্ডল। প্রেমের গল্পে এবার একটু অন্যরকম টুইস্ট রয়েছে। আর এটাই তাঁর হাতে তুরুপের তাস হয়ে উঠেছে।
কাশী ঘাটের (বারাণসী) ছেলে নন্দ (বনি সেনগুপ্ত) কলকাতার কলেজে পড়তে এসে কেন যে প্রথম দর্শনেই আঁখি (কৌশানি মুখোপাধ্যায়) নামের ধনীর দুলালীর প্রেমে প্রায় হাড়গোড় ভেঙে ফেলবে? তার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। সিনেমায় তো এমনটাই হয়, হলও! প্রাথমিক বিরোধের পর বাবা রাজি বিয়েতে। কিন্তু বিয়ের আসরে নন্দ হাজির না হওয়ায় আঁখি হয়ে পড়ে লগ্নভ্রষ্টা। বিয়ে ভাঙার পর বিশ্বাসঘাতক নন্দর খোঁজে বেরোয় আঁখি। পৌঁছে যায় বারাণসীতে। নতুন নাটক, নতুন চমক, নতুন প্রতিশোধের সে গল্প এখানে না হয় নাইবা বলা হল। তার বদলে ছবির গান ও রোমান্টিক মুহূর্তের কথা বলা যাক। তাতে কোনও খামতি রাখেননি পরিচালক।
ছবির লোকেশনে চোখ জুড়িয়ে যায়। সিনেম্যাটোগ্রাফার ঈশ্বর বারিকের কাজ বাণিজ্যিক ছকে হয়েও অন্যরকম। তবে, ছবি দেখতে বসে মনে হচ্ছিল এই গল্পের ‘বীজ’ হয়তো কোনো দক্ষিণী ছবি। নইলে বোনের বিয়ে ভাঙার জন্য ভাইয়ের এমন প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনা বাঙালি মানাসকিতায় আসে কি?
পুরো ছবির কাঠামো, নাট্যের বিস্তার, গঠন, চূড়ান্ত মুহূর্ত তৈরি সবটাই গোলগাল সুন্দর সুন্দর করে বানানো। কোনও চরিত্রের মধ্যে ধূসর দাগ নেই, যেমনটা ফর্মুলজাত ছবি হয় আর কি! অভিনয়েও সেই একই ধারা অনুসরণ করেছেন শিল্পীরা। নন্দ ও আঁখির ভূমিকায় বনি এবং কৌশানি রিয়াল লাইফ যুগলের মতোই জীবন্ত। বনির অভিনয়ে কমেডির একটু আলগা ছোঁয়া থাকায় ওঁকে বিশ্বাস্য লাগে। কিন্তু কৌশানি মডেল পুতুলের মত সুন্দরী, কিন্তু তেমন আবেগ নেই। জাঁদরেল বাবার চরিত্রে কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় দাপট ও স্নেহ দু’টো জিনিসই তুলে এনেছেন। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে কয়েকটি গান আছে বটে, কিন্তু হল থেকে বেরিয়ে একটা গানও কি মনে থাকবে দর্শকের?