চলতি অর্থবছরেই নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু: প্রধানমন্ত্রী

চলতি অর্থবছরেই নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু: প্রধানমন্ত্রী

চলতি অর্থবছরেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে সংসদকে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার জাতীয় সংসদের চলতি ১৩তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, “২০১২-১৩ অর্থবছরের পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এ সেতুতে খরচ হবে ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে লাগবে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি। এর পর ২০১৩-১৪ তে ৭ হাজার ৮৬৮ কোটি, ১৪-১৫ তে ৭ হাজার ৭৮৬ আর ১৫-১৬ তে ৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা লাগবে। পর্যায়ক্রমিকভাবে যে টাকা প্রয়োজন হবে খরচ করবো। ২০১৬ এর মধ্যে এর কাজ শেষ করতে পারবো।”

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকেই দেশের এই সেতুর কাজ এ অর্থবছর থেকে শুরু হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।

পদ্মাসেতুর খরচ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ব্রিজে লাগবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। নদী শাসনে ৭ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। মাওয়া অ্যাপ্রোচ রোডে লাগবে ৩৫০ কোটি টাকা। সেতুর জন্য সারচার্জ বসাবো। এছাড়া জাজিরা অ্যাপ্রোচ রোড করতে লাগকে ১৩৫০ কোটি টাকা। এ টাকা একবারে লাগবে না। সে কারণে আমরা নিজেরা অর্থায়ন করতে পারি। এছাড়া পিপিপি ও বিওটির মাধ্যমে পদ্মাসেতু করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করতে গেলে অনেক উন্নয়ন বাজেট কমাতে হবে। তবে এটাও একটা উন্নয়ন। এ ব্যাপারে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। আমি সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই এর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এলে স্বাগত জানানো হবে।”

সংসদ নেতা বলেন, “বাংলাদেশের যে রেটিং রয়েছে তাতে আমরা বাজারে বন্ড ছাড়তে পারি। এত অনেক টাকা আসবে। ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের সভরেন বন্ড বিশ্ব বাজারে ছাড়া হবে। এখান থেকে অনেক টাকা আসবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণভাবেও বন্ড ছাড়তে পারি। যমুনা ব্রিজে যেভাবে ছাড়া হয়েছিলো।”

তিনি বলেন, “একটা উন্নয়ন তহবিলে ১৫০০ কোটি টাকা আছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী পদ্মাসেতুর জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা রেখেছেন।”

অডিট নিয়ে প্রশ্ন সংসদ নেতার

বিশ্বব্যাংকের অডিট নিয়মিত হয়  কি না তা নিয় প্রশ্ন তুলেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “বিশ্বব্যাংক একটি ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত অডিট হয় কি না তা জানি না।”

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের অফিসাররা কি করে সেটা দেখা হয় কি না তা আমরা জানি না। ব্যালান্স সিট আছে কি না তা জানি না। আমরা বিশ্বব্যাংকের অংশীদার। হিসেব চাওয়ার অধিকার আমাদের আছে। তাদেরকেও বিশ্বের কাছে এটা তুলে ধরা উচিত।”

এর আগে তিনি বলেন, “সরকার গঠন করার পর যতগুলো কাজ করেছি কখনো কেউ অভিযোগ আনতে পারেনি। এবারই দেখলাম দুর্নীতির সম্ভাবনার কথা বলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণ বাতিল করলো। এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। একটি টাকাও যেখানে দেয়নি সেখানে কিভাবে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এলো।”

তিনি বলেন, “সম্পর্ক নষ্ট করতে তারাই এগিয়ে এসেছে। অন্যান্য সহযোগীদেরও তারা নিষেধ করেছে। নিজেরা করেওনি। অন্যদেরও করতে দেয়নি।”

তিনি বলেন, “আমরা যখন উন্নয়ন করতে চাই তখন কেন বাধা দেওয়া হয়?”

শেখ হাসিনা বলেন, “যারা উন্নয়ন সহযোগী তাদের বলবো- অহেতুক বাধা দিয়ে উন্নয়নের গতি রোধ করবেন না। কৃষিতে ভর্তুকি বন্ধ, বিএডিসি বন্ধ, রেলের খারাপ অবস্থা, টিসিবি, পাট শিল্প কাদের পরামর্শে হয়েছে?। সব এক জায়গা থেকে এসেছে।”

বিশ্বব্যাংকের কাছে ক্ষতি পূরণ চাওয়া উচিত

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মাসেতু নির্মাণে দেরি হওয়ায় খরচ বাড়লো। অর্থমন্ত্রীকে বলবো এর জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া উচিত। আমি আগেই বলেছি- পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে টেন্ডার বাতিল করে রি-টেন্ডার করুন। কিন্তু তারা তখন তা করেনি। আমরা সবসময় বলেছি দেরি করাবেন না।”

তিনি বলেন, “তারা অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের না করে দিয়েছে। এডিবি, জাইকা ও আইডিবিকে কাজ করতে দেয়নি। ছুতো ধরে এত বড় সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না। নিজের ঋণ বন্ধ করে অন্যদের বাধা দিয়ে কাজ করতে না দেওয়া কোনো বাঙালি মেনে নিতে পারে না।”

তিনি বলেন, “অনেক সময় তাদের (দাতা গোষ্ঠীর) প্রেসক্রিপশন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা চায় সারাজীবন যেন ভিক্ষা করতে হয়। জনগণকে গিনিপিগ করে রাখতে চায়। যাতে তাদের কাছে হাত পেতে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে থাকতে হয়। আমরা ঋণ নেই সুদসহ পরিশোধ করি। এসব সংস্থার প্রেসক্রিপশন নিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারতাম না। আমরা ভিক্ষা নেই না। ঋণ কিভাবে ব্যবহার করবো তা নিজেরাই ঠিক করবো।”

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, “আমার কাছে অনেক টেলিফোন এসেছে। প্রবাসীরা ফোন করেছে আমাকে বলেছে-আপনি শুরু করেন, টাকা আমরা দেবো। তারা বলেছে কষ্ট করে হলেও রেমিট্যান্স বেশি পাঠাবো। স্কুলের বাচ্চারা বলেছে তারা টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে সাহায্য করবে। সংসদ সদস্যরা বলেছে তারাও বেতনের অংশ দেবেন।”

তিনি বলেন, “মানুষের কাছ থেকে যে সাহস পেয়েছি আমি কৃতজ্ঞ। মনে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের মতো মানুষ আবার চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছে।”

নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যে মানুষের ভোটের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণ করতে পারি তা প্রমাণ করেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সরকারে আসার পর সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৫ হাজার ২০২টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপ-নির্বাচন হয়েছে। সবই শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছে। স্বাধীনভাবে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে। কে কোন দলের সেটা আমরা বিবেচেনা করিনি।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে এসব নির্বাচন পরিচালনা করেছে। যা অতীতে ৭৫ এর পর আর কোনো দিন হয়নি। যেটা মহাজোট করেছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি।”

বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে বেশি কথা বলেছেন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নবম জাতীয় সংসদে ৩১৭টি কার্যদিবস হয়েছে। এর মধ্যে বিরোধী দল এসেছে ৫৫ দিন। বিরোধী দলীয় নেতা এসেছেন ৮ দিন। ৮ দিনের মধ্যে ৫ দিন উনি ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। আনুপাতিক হারে হিসেব করলে বিরোধী দলের নেতা সবচেয়ে বেশি বক্তব্য দিয়েছেন।”

সংসদ নেতা বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও উন্নতি করেছে। কৃষিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা ৪ হাজার ৫৮২টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট চালু করতে সক্ষম হয়েছি।”

তিনি বলেন, “আমরা মানুষের দ্রুত আর্থ-সামজিক উন্নয়ন করতে চাই। এজন্য এবারের বাজেট। এর মাধ্যমে আমরা সার্বিক উন্নয়ন করবো। কাঙ্খিত অগ্রগতি পূরণ করবো।”

প্রসঙ্গ বিদ্যুৎ উৎপাদন

বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাড়ে তিন বছরের যে উৎপাদন হয়েছে তাতে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। নতুন ২৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে যতটুকু বলেছিলাম তার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি।”

বাংলাদেশ