লাখো মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী জননেতা আব্দুর রাজ্জাক। বিকেলে তার মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে জনতার ঢল নামে।
রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় আব্দুর রাজ্জাককে শহীদ মিনারে নেওয়ার আগেই জনতার স্রোত ধাবিত হয় শহীদ মিনারের দিকে। বিকেল তিনটার পর পরই মানুষ ছুটতে থাকে শহীদ মিনারের দিকে আব্দুর রাজ্জাককে শেষ বারের মতো এক নজর দেখা ও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
এদিন বিকেল চারটার পর যখন আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ জাতীয় ঈদগাহ থেকে শহীদ মিনারের দিকে রওনা হলে হাইকোর্টের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মানুষের ভিড় ঠেলে আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ শহীদ মিনারে পাদদেশে নিয়ে রাখা হয়।
এসময় জনতার ভিড়ের চাপ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বার বার হিমশিম খেতে হয়। তবে কিছু সময় পর জনতার বাঁধ নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরপর আব্দুর রাজ্জাকের প্রাণের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুব-কৃষক-শ্রমিক-নারী, মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে আব্দুর রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানান। বিকেল সাড়ে চারটার আগে কিছু আগে আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয় চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
এ সময় আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেশের শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিকবিদ, বুদ্ধিজীবী, মন্ত্রী, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
যে সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি নিবেদন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাসদ, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিকলীগ, যুব মহিলালীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, উদীচী, আওয়ামী হকার্স লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বিএলএফ মুজিব বাহিনী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মঞ্চ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রভৃতি।
আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে আসার পর সেখানে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মনজুরুল আহসান খান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি একে আজাদ চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুছ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার নামার পর আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের লম্বা লাইন শেষ হয়। বৈদ্যুতিক বাতির আলোতে মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও শেষ দেখা দেখতে আসে।
ছয়টার পর যখন তার মরদেহ শহীদ মিনার থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন অনেকে অপেক্ষা করছিলেন শেষ বারের মতো দেখার জন্য।
এর পর শহীদ মিনার থেকে আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে, যে দলের পতাকা তুলে তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন পার করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-উত্তর সব আন্দোলন-সংগ্রামসহ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।
সেখানে তাকে কিছুক্ষণ রেখে ও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বারডেমের হিমঘরে।