মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ৯ দিন বাকি থাকতেও ওই প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উন্মত্ত জনতাকে ‘অভ্যুত্থানে প্ররোচনা’ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের রুলস কমিটির চেয়ারপার্সন জিম ম্যাকগভের্ন বলেছেন, আগামী বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হতে পারে। প্রতিনিধি পরিষদের ওই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি পাস হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন আভাস দেন জিম।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে গত সপ্তাহেই ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ক্যাপিটল হিলের ভেতরে যেভাবে এ সহিংসতা চালানো হয়েছে তাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। আর এ সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পকে অভিশংসনের জোরালো দাবি উঠেছে। এরইমধ্যে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা।
সোমবার ডেমোক্র্যাটিক রিপ্রেজেন্টেটিভ জিম ম্যাকগভের্ন বলেন, ‘এ প্রেসিডেন্ট বিবেকবর্জিত কাজ করেছেন। এর জন্য তাকে দায়ী করতে হবে।’
অভিশংসন প্রস্তাব প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কিনা সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে এবং সুচিন্তিত উপায়ে কাজ করছি কিনা তা জরুরি। আমরা আশা করছি বুধবার প্রতিনিধি পরিষেই এর সুরাহা করবে। আমার আশা প্রস্তাবটি পাস হবে।’
অভিশংসন প্রস্তাবে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার মধ্য দিয়ে উচ্চ অপরাধ ও অপকর্ম সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।’ আইনপ্রণেতারা যুক্তি দেখিয়েছেন, ট্রাম্প যেভাবে নির্বাচনকে খর্ব করেছেন এবং ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার দিনে সমর্থকদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্য দিয়ে ‘তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন।
৪৩৫ আসনবিশিষ্ট প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হতে যাওয়া আর্টিকেল অব ইমপিচমেন্টে রবিবার (১০ জানুয়ারি) নাগাদ কো স্পন্সর করেছেন ২০০ জন। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সেখানে পাস হওয়ার পর তা উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠাতে হবে। ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে হলে আর্টিকেলটি প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাসের পর তা সিনেটেও দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস করাতে হবে।
এদিকে অভিশংসন প্রস্তাবে বলা হয়, সহিংসতার আগে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনে জেতার ভুয়া দাবিও সেখানে করেছিলেন তিনি। এছাড়া প্রস্তাবে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান সেক্রেটারি অব স্টেটকে ফোন করার কথাও উল্লেখ করা হয়, যাতে ট্রাম্প ওই রাজ্যে তার জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট খুঁজে বের করতে বলেছিলেন। এসবের মাধ্যমে ট্রাম্প গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। নিরাপত্তা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিপন্ন অবস্থার মধ্যে ফেলেছেন তিনি।
অভিশংসন প্রস্তাবে আরও বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তরে হস্তক্ষেপ করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আগামী বুধবার ভোট হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি দুবার অভিশংসন প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়েছেন।
সিএনএন জানায়, ট্রাম্পের উসকানিতে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় তার সমর্থকেরা। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিতে কংগ্রেসে অধিবেশন বসেছিল।
সেই সহিংসতায় ক্যাপিটলের একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জন মারা যান।