প্রবাসীদের কল‌্যাণে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

প্রবাসীদের কল‌্যাণে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

প্রবাসীদের কল‌্যাণে বর্তমান সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফিরে আসা প্রবাসীদেরও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ‌্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

দক্ষ হয়ে বিদেশে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশ নামক সোনার হরিণের পেছনে অন্ধের মতো ছুটবেন না। যেকোনও দেশে যাওয়ার আগে কোথায় যাচ্ছেন, কী কাজে যাচ্ছেন তা ভালোভাবে জেনে নেবেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাজের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ওই কাজে নিজেকে দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরি করে বিদেশে গেলে হেনস্থার শিকার হতে হবে না।’

করোনাকালে দেশে ফেরা প্রবাসীদের হতাশ না হয়ে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এবারের অভিবাসী দিবসের প্রতিবাদ‌্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান।’ খুব চমৎকার একটি প্রতিবাদ‌্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশ যখন যাবেন, কোন কাজে যাচ্ছেন সেটা নির্ধারণ করতে হবে। তার ওপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর এই দক্ষতা অর্জনের জন‌্য আমরা কিন্তু যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং সেন্টার করে দিচ্ছি।’’

প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ‌্যে আমরা নতুন করে ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা অনুরোধ করবো, আমাদের এ শ্রমিক অভিবাসনের সঙ্গে যারা জড়িত, বিশেষ করে রিক্রুটিং এজেন্ট থেকে শুরু করে আমাদের মন্ত্রণালয়, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, এদেশের মানুষও কিন্তু মানুষ, সেভাবে তাদের মর্যাদা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যারা বিদেশে যেতে চান, তাদের কর্মসংস্থান ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, তাদের নিরাপত্তা ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, বিশেষ করে মেয়েরা, যারা যান, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত যারা এবং বিদেশে কর্মী পাঠানোর যেসব সংগঠন আছে, তাদের আমি দায়িত্বশীলভাবে ভূমিকা পালন করার অনুরোধ করবো। কারণ, দায়িত্বটা আপনাদের ওপরই বর্তায়।

করোনার কারণে যারা দেশে ফিরে এসেছে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ঋণ নিয়ে ব‌্যবসা-বাণিজ‌্য করতে পারেন। হতাশ না হয়ে নিজেরা নিজের দেশে কাজ করেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুজিববর্ষে প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। ইতিমধ‌্যে ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। আর সেই সাথে দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যাদের ভূমি নেই, ঘর নেই তাদের আমরা ঘর করে দেবো। যাতে আত্মমর্যাদার সঙ্গে তারা বাঁচতে পারে।’

বর্তমানে দেশে কাজের ও খাবারের অভাব নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন একটা সময় ছিল যখন দেশে কর্মসংস্থানের অভাব ছিল। যুব সমাজ যারা কর্মক্ষম তারা কাজ খুঁজে পেতেন না। ফলে তাদেরকে বিদেশে পাড়ি দিতে হতো। অনেকে ভালোভাবে যেতে পেরেছেন, আবার অনেকে ধোঁকায় পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে নিজের জীবন নষ্ট করেছেন। কিন্তু বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিদেশে বিনিয়োগ আসছে। তাই বিদেশে না গিয়েও নিজেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী হিসেবে গড়ে তুলে দেশেই চাহিদা অনুসারে অর্থ উপার্জন সম্ভব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাদের সার্বিক কল্যাণেও বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একসময় জমিজামা ও ভিটেমাটি বিক্রি বা চড়া সুদে বন্ধক রেখে ঋণ করে বিদেশে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া যায়, সেজন্য জমিজমা ও ভিটেমাটি বিক্রি করতে হবে না।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রনালয়ের সচিব ড.আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কর্মীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান ও সিআইপি (এনআরবি) সনদ প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর