এসইসি’র কর্পোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালার নির্দেশনা প্রকাশ

এসইসি’র কর্পোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালার নির্দেশনা প্রকাশ

তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর্পোরেট গভর্ন্যান্স পরিপালন বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।

এসইসি কোম্পানির ৭টি ইস্যুতে এ নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনাগুলো হল- পরিচালনা পর্ষদ, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও), কোম্পানি সেক্রেটারি, অডিট কমিটি, বহিরাগত নিরীক্ষক, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং সিএফও’র দায়িত্ব ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্স পরিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।

পরিচালনা পর্ষদের জন্য নিদের্শনা জারি করা হয়েছে সেগুলো হলো- পরিচালনা পর্ষদের নূন্যতম সদস্য ৫ জন ও সর্বোচ্চ ২০ জন হতে পারবে। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নির্দেশনা কার্যকর হবে। পরিচালনা পর্ষদে নূন্যতম ৫ ভাগের ১ ভাগ স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে।

স্বাধীন পরিচালকরা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। এছাড়া তার পরিবারের কোনও সদস্যেরও কোম্পানিতে ১ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে পারবে না। পরিবারের সদস্য বলতে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র, কন্যা বাবা, মা, ভাই, বোন, জামাতা অথবা পুত্রবধুকে বোঝানো হয়েছে।

কোম্পানির সাবসিডিয়ারি অথবা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাধীন পরিচালকের অর্থ-সংক্রান্ত লেনদেন অথবা অন্যকোন সম্পর্ক থাকতে পারবে না। কোনও স্টক এক্সচেঞ্জ অথবা শেয়ারবাজারে মধ্যস্থতাকারী (ইন্টারমিডিয়ারিজ) প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার, সদস্য, পরিচালক ও কমকর্তারা কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। একই সাথে একজন ব্যক্তি ৩টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। ব্যাংক অথবা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপী হতে পারবেন না। স্বাধীন পরিচালক পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নির্বাচিত ও বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডার দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।

স্বাধীন পরিচালকে পদ ৯০ দিনের বেশি খালি রাখা যাবে না। স্বাধীন পরিচালকের সাথে চুক্তির মেয়াদ ৩ বছরের বেশি হতে পারবে না। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে তা পরবর্তীতে ১ মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

স্বাধীন পরিচালকের অবশ্যই আর্থিক, নীতিমালা এবং কর্পোরেট আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে ধারাণা থাকতে হবে। ব্যবসায়িক লিডার, কর্পোরেট লিডার, ব্র’ক্রেট, অর্থনীতি ব্যবসায় শিক্ষা অথবা আইন বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এছড়া চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট অথবা চার্টার্ড সেক্রেটারিরা স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন। স্বাধীন পরিচালকদের ব্যবস্থাপনা ও তার পেশাগত ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যে কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে এ শিথিল করা যাবে।

চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নির্বাচিত হবে। পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান ও সিইও কাজ কি হবে তা নির্ধারণ করবেন।

পরিচালনা পর্ষদরা ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১৮৪ নম্বর ধারা অনুসারে শেয়ার হোল্ডারদের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন প্রদান করবেন। কোম্পানির প্রধান ৫ কর্মকর্তা বা নির্বাহীদের বেতন ভাতাদি প্রকাশ করতে হবে। প্রধান ৫ কর্মকর্তা যেমন- পরিচালক, সিইও, কোম্পানি সচিব, সিএফও এবং ইন্টার অডিট বিভাগের প্রধান।

কোম্পানিকে অবশ্যই সিএফও, কোম্পানি সচিব ও ইন্টারনাল অডিট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব কর্তব্য পরিচালনা পর্ষদ নির্ধারণ করে দেবে। সিএফও ও কোম্পানি সচিব কোম্পানির পরিচারনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। তবে সিএফও ও কোম্পানির সচিব সংক্রান্ত কোন এজেন্ডার বৈঠকে তারা উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

পরিচালনা পর্ষদের সাব-কমিটি হিসেবে কোম্পানির অবশ্যই একটি অডিট কমিটি থাকাতে হবে। কোম্পানির অর্থিক প্রতিবেদন ‘ট্র অ্যান্ড ফেয়ার ভিউ’ প্রদানের অডিট কমিটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে সহায়তা করবে। কোম্পানির ব্যবসা পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে পরিচালনা পর্ষদকে সহায়তা করবে অডিট কমিটি। অডিট কমিটি তার কাজের জন্য পরিচালনা পর্ষদের কাছে জবাবদিহিতা প্রদান করবে। অডিট কমিটিতে নূন্যতম ৩ জন সদস্য থাকতে হবে। যার মধ্যে নূন্যতম ১ জন স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে।

অডিট কমিটির সকল সদস্যের ‘ফিন্যান্সিয়ালি লিটারেট’ (আর্থিক প্রতিবেদন সংক্রান্ত জ্ঞান) থাকতে হবে। কমিটির অন্তত ১ জন সদস্যকে হিসাব বিজ্ঞান অথবা আর্থিক ব্যবস্থাপান সংক্রান্ত বিষয়ে ১২ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অডিট কমিটির কোরাম গঠনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ জন স্বাধীন পরিচালক হতে হবে।

কমিটির চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদ নির্ধারণ করবে। স্বাধীন পরিচালক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান হতে পারবেন। অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এজিএমে উপস্থিত থাকবেন।

অডিট কমিটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন নীতিমালা, অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপানা বিভন্ন দুর্বলতা পর্যবেক্ষণ করবেন। কোম্পানি প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) ও পুনঃগণ প্রস্তাব (আরপিও) অর্থ কোন কোন খাতে ব্যবহার করেছে কোম্পানি তা সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন অডিট কমিটির কাছে প্রদান করতে হবে।

কোম্পনির বহিরাগত নিরীক্ষক কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, হিসাব, ব্রোকার ও ডিলার সার্ভিস, একচুরিয়াল সেবা প্রদান করতে পারবে না।

মূল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ন্যূনতম ১ জন স্বাধীন পরিচালক সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হবে। সাবসিডিয়ারি কোম্পানির বৈঠকের বিষয়বস্তু মূল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে। সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এমন বিষয় মূল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

মূল কোম্পানির অডিট কমিটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করবেন। সিইও ও সিএফও পরিচালনা পর্ষদকে সার্টিফায়েড করবে যে- তারা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষ করেছেন। এছাড়া কোম্পানি কোন প্রতারণামূলক, বেআইনি, বা নিয়য়ম বর্হিভুতভাবে কোন লেনদেন করেনি সে বিষয়ে নিশ্চিত করবেন।

কোম্পানি কর্পোরেট গর্ভন্যান্স নীতিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছে সে বিষয়টি নিশ্চত করতে হবে। এ জন্য চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট অথবা চার্টার্ড সেক্রেটারি দ্বারা সনদ নিতে হবে। নীতিমাল যথাযথ অনুসরণ করা হয়েছে- এ মর্মে পরিচালকরা একটি প্রতিবেদন প্রদান করবেন।

অর্থ বাণিজ্য