ডাচবাংলা ব্যাংকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ব্যাংকটির অসাধু কর্মকর্তারা প্রতারকদের এ অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছে। দুদকের চেয়ারম্যান ছাড়াও এর কমিশনারদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারক চক্রটি এ কাজ করেছে। দুদক ও র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এরই মধ্যে অপরাধীদের পাকড়াও করেছে র্যাব। তাদের নিয়ে শুক্রবার বন্ধের দিন হঠাৎ দুদক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দুদক। কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয় অপরাধীদের।
র্যাবের তদন্ত দল বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পরিচয়ধারী প্রতারক জিয়াউল হককে রাজধানীর জুরাইন থেকে গ্রেফতার করে। পরে জিয়াউল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর অভিযুক্ত ইসরাফিলকে রামপুরা টিভি ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান দুদকের পরিচালক (পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন) মেজর আশীষ সরকার।
জরুরি এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক বা একাধিক সংঘবন্ধ চক্র বহুদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এই বিষয়ে ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব যথারীতি পেশাদারিত্বের সঙ্গে বৃহস্পতিবার একটি চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।’’
মেজর আশীষ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনে দুর্নীতির অভিযোগ হতে অব্যহতি দেওয়ার নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থ দাবির বিষয়টি কমিশনের নজরে আসলে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।’’
র্যাব ১০-এর পরিচালক লে. কর্ণেল আমির মজিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘কয়েকজন সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এবং বিভিন্ন থানার জিডির মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যে, এক ব্যক্তি নিজেকে কখনও দুদকের চেয়ারম্যান কখনও দুদকের বিভিন্ন কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যানের এপিএস পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে আসছে।’’
তিনি জানান, প্রতারক চক্রটি অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে। দুদক থেকে বিষয়টি র্যাবকে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রতারক চক্রটি যেখানে অ্যাকাউন্ট করেছিল তার সূত্র ধরে প্রথমে জিয়াকে পরে ইসরাফিলকে গ্রেফতার করে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসরাফিল বলেন, ‘‘জিয়ার পরামর্শে ডাচবাংলা ব্যাংকের শান্তিনগর শাখায় দুদকের চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে (গোলাম রহমান) একটি অ্যাকাউন্ট খুলি। চেক বইয়ের সব পাতায় স্বাক্ষর দিয়ে জিয়ার কাছে হস্তান্তর করি। এ ঘটনার পর থেকে জিয়ার সঙ্গে আর দেখা হয়নি।’’
ইসরাফিল বলেন, “কিছুদিন পর ডাচবাংলা ব্যাংকের এ অ্যাকাউন্টটিতে দুর্নীতি হচ্ছে এমন অভিযোগ আমি জানতে পারি অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোডিউসার এনামুল হকের মাধ্যমে। তারপর আমি জিয়াকে ফোন করে বিষয়টি জানালে সে আমাকে এ বিষয়ে পরে কথা বলবে বলে জানায় এবং পরে আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি।“
ইসরাফিল জানায়, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে জিয়া তাকে ফোন দিয়ে রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে দেখা করতে বলে। দেখা করলে র্যাব তাকেও গ্রেফতার করে।
জিয়াউর রহমান এ পর্যন্ত পৌনে এক কোটি টাকা দুদক চেয়ারম্যান কমিশনারদের নামে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও সাংবাদিকদের সে জানায়, এ পর্যন্ত দুদকের কর্মকর্তাদের নামে ৭/৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
র্যাব ও দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুজনই স্বীকার করেছেন ডাচবাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এ অপকর্ম করেছেন। যার সঙ্গে ডাচ-বাংলার অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত।