শিপ্রার মাদক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশের ‘নারাজি’

শিপ্রার মাদক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশের ‘নারাজি’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদক আইনের মামলায় র‌্যাবের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার পুলিশের ‘নারাজি’ আবেদন আমলে নিয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দিয়েছেন কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালত।

সেই সঙ্গে বিচারক এ মামলায় শিপ্রা দেবনাথকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন।

‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সিনহা প্রায় একমাস কক্সবাজারের হিমছড়িতে ছিলেন। ওই কাজেই তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাত।

ওই রাতেই কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকা সংলগ্ন নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে সে সময় কিছু মাদক পাওয়ার কথাও বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

পরদিন শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে রামু থানায় মাদক আইনে মামলা করে। আর সিনহার গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয় সিফাতের বিরুদ্ধে।

পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২ অগাস্ট উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগগুলোও নতুন করে আলোচনায় আসতে শুরু থাকে।

সিনহার বোন আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে অত্মসমর্পণ করেন। তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

এছাড়া এই ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশকে নতুন করে সাজানো হয়। এসপি থেকে কনস্টেবল- প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার দশ দিন পর গত ১০ অগাস্ট জামিনে মুক্তি পান শিপ্রা ও সিফাত। তখনই মামলা দুটির তদন্তভার র‌্যাবকে দেওয়া হয়।

তদন্ত শেষে গত ১৩ ডিসেম্বর সিনহার বোনের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পাশাপাশি সিফাত ও শিপ্রার বিরুদ্ধে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে র‌্যাব জানায়, অভিযোগের কোনো সত্যতা তারা পায়নি।

বৃহস্পতিবার শিপ্রার মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পুলিশ নারাজি দেওয়ায়, আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে দিল।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকা সংলগ্ন নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য ও কম্পিউটারসহ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়। এছাড়া সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে রামু থানায় একটি মাদক মামলা করে। মামলা তদন্তের জন্য র‌্যাবকে দায়িত্ব দেন আদালত।

এরপর গত ৯ ডিসেম্বর শিপ্রা দেবনাথ কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরে আদালত এই মামলা ও সিফাতের মামলা র‌্যাবকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। র‌্যাব তদন্ত শেষে গত ১৩ ডিসেম্বর সিনহা বোনের মামলায় অভিযোগ পত্র দাখিলের পাশাপাশি সিফাতের ২ মামলা ও শিপ্রার এক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

গত ২১ ডিসেম্বর সিনহার বোনের মামলায় অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করার পাশাপাশি সিফাতের ২ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার শিপ্রার মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পুলিশের নারাজি দেওয়ায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করে।

এ বিষয়ে শিপ্রার আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া তপু জানান, সিনহা নিহতের ঘটনায় শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের মামলার বিচারকাজের নির্ধারিত দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এতে বাদীপক্ষ র‌্যাবের জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে পরবর্তীতে শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করার আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আদালত মামলার আসামি শিপ্রা দেবনাথকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন বলেও জানান আসামিপক্ষের এ আইনজীবী।

এদিকে, আদালতের আদেশ নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে শিপ্রা দেবনাথ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। এটা নিয়ে সন্তুষ্টির কিছুই নাই। আমরা আসলে সিনহাকে ফিরে পাব না। সবচাইতে বড় সত্য এটা। তাই সন্তুষ্টির কিছুই নাই।’

তার পরও পরবর্তী সময় বিচারের জন্য আদালতের দিকে চেয়ে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন শিপ্রা দেবনাথ।

আইন আদালত শীর্ষ খবর