বাংলাদেশে করোনাভাইরাসটি আবারও রূপ (মিউটেশন) পরিবর্তন করেছে। ভাইরাসটির পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা (হোল জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটিতে নতুন আরেকটি শক্তিশালী ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে। এটির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের মিল আছে। তবে এটি এখনো অতটা ভয়ংকর নয়। এর প্রভাব কতটুকু, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে মূলত ভাইরসাটি বাহককে আক্রমণ করে। এই স্পাইক প্রোটিনে ১ হাজার ২৭৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডটি আগে থেকেই বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল।
নতুন আরও দুই সক্রিয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের নাম ‘পি৬৮১আর’ এবং ‘ডি১১১৮ আর’। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪৮৩টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা বের করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকেরা ২৮০টি ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা উন্মোচন করেছেন। এগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিসএআইডি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলিক্যাল ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিসিএসআইআর ছাড়া আরও নয়টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচনের গবেষণায় কাজ করছে।
জিসএআইডি–এর ওয়েবসাইট বলছে, সারা বিশ্বের ১৬টি জায়গায় করোনাভাইরাসের ‘পি৬৮১আর’ ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনটি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে গত ৫ অক্টোবর এই ধরনটি গবেষকেরা পেয়েছেন। বিশ্বে প্রথম পি৬৮১আর ধরনটি পাওয়া গেছে গত ২৭ আগস্টে পেরুর রাজধানী লিমাতে। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাশিয়াতে সেন্ট পিটার্সবার্গে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরিতে আটটি এবং সর্বশেষ ডেনমার্কের জিল্যান্ডে একটি করোনাভাইরাসের নমুনায় পি৬৮১আর ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে।
জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম খান বলেন, নতুন পাওয়া দুটি ধরন বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের ১৬ জায়গায় পাওয়া গেছে। এটিও বেশ স্বতন্ত্র। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (ওয়েভ) চলছে। এখন শীতের মৌসুম চলছে। এই ধরনটি কতটা শক্তি নিয়ে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, আদৌ সে সম্পর্কে এখনো আমরা জানি না।’
বিসিএসআইআরের গবেষকেরা জানিয়েছেন, দেশের করোনাভাইরাসটির গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে, সেটির গবেষণায় আরও ৭০০টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা বের করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ডিজিজ অ্যাসেসমেন্টের ২০ ডিসেম্বরের ব্রিফিং অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে যেখানে স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনে পি৬৮১এইচ ও ডি১১১৮এইচ আছে সেখানে।
দেশের করোনাভাইরাসের গতিপথ কোন দিকে ও কতটা শক্তিশালী—জানতে চাইলে মো. সেলিম খান বলেন, করোনাভাইরাসটি খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। এটি আরও রূপান্তরিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর চরিত্র কেমন হবে বা শক্তিশালী হবে কি না, তা বলা মুশকিল। এর জন্য করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা উন্মোচনের গবেষণাটি চালিয়ে যেতে হবে।