গরীব রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তায় ‘বিলিয়নেয়ার ট্যাক্স’ নির্ধারণের আহ্বান

গরীব রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তায় ‘বিলিয়নেয়ার ট্যাক্স’ নির্ধারণের আহ্বান

গরীব রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তার জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠনে বিশ্বে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের ওপর কর আরোপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি।

এছাড়া, জাতিসংঘ প্রতিবেদনে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কর বাবদ এককালীন অর্থ প্রদান, মুদ্রা বিনিময় এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর করা আরোপ করে ধনী দেশগুলোর বার্ষিক এককালীন অর্থ প্রদানের মতো আরো কিছু বিষয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভাগ্যাহত রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার জন্য সম্পদশালী জাতিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতি এবং সামাজিক জরিপ সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুত অর্থের প্রাপ্তি অনিশ্চিয়তা মুখে পড়ার প্রেক্ষিতে এখন গরীব রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তার জন্য ভিন্ন পথ খোঁজা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কমপক্ষে একশ’ কোটি (এক বিলিয়ন) অর্থের মালিক এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২০১২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক এক হাজার ২শ’ ২৬ জনে।

এর মধ্যে প্রায় ৪২৫ জনই আছে যুক্তরাষ্ট্রে, ৩১৫ জন এশিয়া-প্রশান্তমহাসগরীয় অঞ্চলে, ৩১০ জন ইউরোপে, ৯০ জন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশে এবং ৮৬ জন বিলিয়নেয়ার আছে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে।

এদের সবার মিলে মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার। সুতরাং এই বিলিয়নেয়ার প্রত্যেকের সম্পদের ওপর মাত্র এক শতাংশ কর ধার্য করলে ৪ হাজার ৬শ’ কোটি ডলারের তহবিল গঠন সম্ভব।

আর এ কর দিলে তাদের সম্পদে কোনো প্রভাবই পড়বে না উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গড় বিলিয়নেয়াররা কর দেওয়ার পরও তাদের তিন হাজার ৭শ’ কোটি ডলার থেকে যাবে। এসব বিলিয়নেয়ার যদি প্রতিদিন এক হাজার ডলার খরচ করেন তাহলে এ পরিমাণ অর্থ খরচ করতে তাদের প্রত্যেকের ১০ হাজার বছর বেঁচে থাকতে হবে।

উপরন্তু ২০০৮-০৯ অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় বাদে অন্য সময়ে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ গড়ে ৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। এখন এই বিশাল সম্পত্তির ওপর কোনো কর আরোপিত না হলে এবং বৃদ্ধি হার অব্যাহত থাকলে আগামী মাত্র ১৮ বছরের মধ্যে বিদ্যমান সম্পত্তি দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

অবশ্য জাতিসংঘ তাদের এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের ব্যাপারে টার্গেটকৃত গ্রুপের পক্ষ থেকে খুব একটা সাড়া আসবে বলে মনে করছে না। তবে বিপুল সম্পদের ওপর কর আরোপের ধারণা একটি উৎসাহব্যঞ্জক সম্ভাবনা কথা বলেই মনে করছে তারা।

প্রতিষ্ঠানটি আরো কিছু বিষয়ের ওপর কর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। যেমন-

– কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ ডলার। যাতে অর্থ সংগৃহিত হবে বছরে ২৫ হাজার কোটি ডলার।

– ডলার, ইয়েন, ইউরো এবং পাউন্ডে মুদ্রা বিনিময়ের ওপর ০.০০৫ শতাংশ কর যাতে বছরে সংগৃহিত হবে ৪ হাজার কোটি ডলার।

– আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রস্তাবিত কর যাতে বছরে আনুমানিক ৭ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করা যাবে।

এছাড়া বিমান টিকিটের ওপর আরো বিস্তৃত আকারে কর নির্ধারণেরও প্রস্তাব করেছে জাতিসংঘ। অবশ্য গরীব দেশগুলোতে ওষুধ সরবরাহের অর্থ সংগ্রহে জাতিসংঘের উদ্যোগে ইউনিটএইডের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ ইতোমধ্যেই এ উদ্যোগ নিয়েছে।

আন্তর্জাতিক