সিরিয়াতে প্রায় দেড় বছর ধরে চলা সহিংসতার অবসান ঘটানোর উপায় নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জড়ো হয়েছে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রতিনিধি। তবে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের দুই অন্যতম মিত্র বলে পরিচিত চীন ও রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ ও আরব লিগের বিশেষ দূত কফি আনানের প্রস্তাবিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের ভিত্তিতে বিশ্ব শক্তিগুলো সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তনের রোডম্যাপ প্রণয়নে ঐক্যমতে পৌঁছে। তবে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পরিকিল্পত ওই রোডম্যাপের ব্যাপারে রাশিয়া ভিন্নমত পোষণ করেছে।
একই সঙ্গে সিরিয়ার বিরোধী গ্রুপগুলোও কফি আনানের পরিকল্পনার অস্পষ্টতার উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গত বুধবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে এ বৈঠকে সব বিরোধী গ্রুপ একজোট হয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণনয়ন করেছে। বৈঠকে বিরোধী গ্রুপগুলো বিদ্রোহী সেনা সংগঠন ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে।
আর এ প্রেক্ষিতে এবার প্যারিস সম্মেলনের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ ব্যাপারে শুক্রবার উদ্বোধনী দিনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া হলাঁদে বলেছেন, “সিরিয়ার সহিংসতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সুতরাং এর একটা বিহিত করতেই হবে।”
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তুরস্কে গেছেন বলে জানা গেছে। সরকার সমর্থক ওয়েবসাইট সিরিয়াস্টেপ জানিয়েছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মানাফ তালাস ‘পালিয়ে’ গেছেন। তবে এটা তেমন ‘উল্লেখযোগ্য’ ঘটনা নয়।
ব্রিগেডিয়ার মানাফের তুরস্কে যাওয়ার বিষয়টি অনেক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন কি না তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
অবশ্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি সিরিয়াতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরুর পর অনেক সেনা কর্মকর্তাই বিদ্রোহী হয়েছে। তারা ফ্রি সিরিয়ান আর্মি নামে সংগঠনও গঠন করেছে। তবে মানাফের ‘পালিয়ে’ যাওয়ার ঘটনা সঠিক হলে প্রেসিডেন্ট আসাদের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো সমর্থক কর্মকর্তার বিদ্রোহী হওয়ার প্রথম ঘটনা হবে এটি। আর একারণেই এটি এ মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এর আগেও ব্রিগেডিয়ার মানাফের বিদ্রোহী হওয়ার খরব বেরিয়েছিল। তবে তা পরে ভুল প্রমাণিত হয়। সুতরাং নিজের সিদ্ধান্তের কথা তিনি জনসমক্ষে প্রকাশ না করা পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মানাফ সিরিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ছেলে। তিনি বর্তমানে রিপাবলিকান গার্ডে দায়িত্বরত।
এদিকে তিউনিসিয়া এবং তুরস্ক সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা এই উপসাগরীয় দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অবরোধ আরোপের চেষ্টা করছে। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার আপত্তির কারণে তা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এযাবত দু’বার ব্যর্থ হয়েছে।