২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামিতে নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর পর ফিরে এলো ওয়াতি।
মেরি ইউলান্ডা ডাক নাম ওয়াতি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০০৪ সালে ভয়াবহ সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে থেকে হারিয়ে যায়।
বর্তমানে ১৪ বছর বয়সী মেরি আপনজনদের খোঁজে নানা স্থানে হন্যে হয়ে ঘুরেছে। সর্বশেষ তার জন্ম শহরের একটি ক্যাফেতে এসে বাবা-মার খোঁজ করে। কিন্তু দাদা ইবরাহীম ছাড়া আর কারও নাম সে স্মরণ করতে পারছিল না। ভাগ্যক্রমে ওই ক্যাফেতে তার পরিবারের পরিচিত একজন দাদার নাম চিনতে পারেন। তার মাধ্যমেই ওয়াতি শেষ পর্যন্ত বাবা-মার কাছে ফিরে আসে।
ওয়াতির মুখে পড়ে জানা যায়, দুর্যোগে ভেসে যাওয়ার পর এক বিধবা তাকে খুঁজে পায়। কিন্তু ওই বিধবা তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করে। সেখানে অনেকটা বন্দি জীবন যাপন করেছে মেরি। দীর্ঘ সাত বছর পর অবশেষে সেই বিধবার হাত থেকে গত সপ্তাহে ছাড়া পেল সে।
পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর মেরি তার প্রতিক্রিয়ায় বলে, ‘আমি মাকে দেখেই চিনতে পারি।’
মেরি যখন তার মাকে দেখতে পায় তখনই সে মা….. মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে তার দিকে দৌড় দেয়। দু’জনেই দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
মেরির পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দৃশ্য এভাবেই একটি সংবাদ সংস্থার কাছে বর্ণনা করেন মেয়েটির বাবা তারমিয়াস।
সন্তান ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন মেরির মা ইয়াসনিদার। তাই প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি। এমনকি প্রথমে মেয়েকে চিনতেও পারেননি।
সুনামির ঢেউ যখন আচেহ উপকূলে মেরিদের গ্রাম উজংবোরাহতে আঘাত হানে তখন মেরি ও তার বোন পানিতে ভেসে যায়। দুর্যোগ কেটে গেলে ইয়াসনিদার এবং তার স্ত্রী তাদের হারানো সন্তানদের ফিরে পেতে নানা স্থানে খোঁজ করেন। কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
মেরিকে শেষ পর্যন্ত ফিরে পেলেও ইয়াসনিদার পরিবারের বড় মেয়েকে এখনও ফিরে আসেনি।
২০০৪ সালের সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশ সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সুনামিতে কমপক্ষে দুই লাখ ত্রিশ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
এছাড়া সুনামিতে ভেসে যাওয়া প্রায় ১০ হাজার মানুষকে আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অসংখ্য পরিবার জানে না, তাদের আপনজনের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল।
সুনামির আঘাতে আচেহ প্রদেশেই এক লাখ ৬৮ হাজার লোক প্রাণ হারায়। আচেহর অনেক পরিবার এখনও তাদের প্রিয়জন ফিরে আসার প্রতীক্ষায় থাকে।
মেরির মতো সুনামিতে হারিয়ে যাওয়াদের ফিরে আসার ঘটনা খুবই বিরল।