প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা একটা পয়সা ছাড় দেয়নি তাদের ভেতরের দুর্নীতি কে দেখে? বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে তিনি জাতীয় সংসদে এ প্রশ্ন তোলেন।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, “ওয়াল স্ট্রিট আর ফোর্বস দেখলেই বোঝা যাবে কে দুর্নীতি করে?”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতুতে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক নিজেই এগিয়ে এসেছিলো। হঠাৎ তারাই আবার দুর্নীতির অভিযোগ তুললো। যেখানে এখন পর্যন্ত একটা টাকাও ছাড় হয়নি। সেখানে কিভাবে দুর্নীতি হলো?”
তিনি বলেন, “পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে এর পেছনে কে বা কারা, কোন উদ্দেশ্যে আছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “পদ্মাসেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ একটি কোম্পানিকে দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক তিনবার চিঠি দিয়েছিলো, চাপ দিয়েছিলো। বিদেশে একটি কোম্পানির সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের যোগসূত্র ছিলো। তারা বলেছে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর কমিটিও ওই প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেনি।”
সংসদে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “তাহলে দুর্নীতি কোথায়?”
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা আমার কাছে এসেছিলো। দু’টি চিঠি দেখিয়েছিলো, আমি সেগুলো দেখেছি। সেগুলো বিএনপির সময়ের দুর্নীতির চিঠি। আমি তাদেরকে বলেছি ওখানে বিএনপির সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রীর নাম ছিলো। তারিখ পর্যন্ত দেখিয়েছি। তারা বলেছে তাদের কাছে আরও তথ্য আছে। আমরা সেগুলো চেয়েছি।”
আমার পরিবার মানে আমরা দুইবোন ও আমাদের ৫ সন্তান
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি দেশবাসীসহ সকল সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলবো– কেউ যদি আমার পরিবারের নাম ভাঙিয়ে কোনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন।”
এরপর তিনি তার পরিবার বিষয়ে ব্যাখা দেন। তিনি বলেন, “আমার পরিবার মানে আমরা দুইবোন ও আমাদের ৫ সন্তান। এর বাইরে আমার পরিবার বলে কিছু নেই।”
এসময় প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যড্রেস [email protected] এবং ০১৭১১৫২০০০০ ও ০১৮১৯২৬০৩৭১ নম্বর দুটি জানান। শেখ হাসিনা এসময় তার পরিবারের কারো নামে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে মেইল ও এসএমএস দিয়ে জানানোর জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “যদি কোনো মন্ত্রী জড়িত থাকে তবে প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অপবাদ দিয়েছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।”
বিএনপির জ্বালানি উপদেষ্টা দুর্নীতি করে এখন বড় বড় কথা বলে
এর আগে তিনি বলেন, “চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি-যোগাযোগ খাতে দুর্নীতি হওয়ায় বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করেছিলো। এবিষয়ে অর্থমন্ত্রী বিস্তারিত বলেছেন। কোন ৭টি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছিলো তিনি তাও বলেছেন।”
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংক যখনই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তখনই মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছি। সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কোন সরকার করেছে? বিএনপির আমলে জ্বালানি উপদেষ্টা কে ছিলো? সেই সময় দুর্নীতি করে এখন পত্রিকা বের করে বড় বড় কথা বলে!”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময়ে জাপান সফরে ওই দেশের সরকার দু’টি সেতুর বিষয়ে আশ্বস্ত করে। একটি রূপসা আর একটি পদ্মা। রূপসা ছোট ব্রিজ সেটি হয়ে গেছে। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পদ্মার কাজ বন্ধ করে দিলো। বিএনপির দুর্নীতির কারণেই বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এবার ক্ষমতায় আসার পরে বিশ্বব্যাংকই এগিয়ে আসে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভূমি অধিগ্রহণের কাজে ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের লোকজন সেখানে গিয়েছিলো। সেখানেই যেহেতু দুর্নীতি হয়নি, তাহলে কোথায় দুর্নীতি হলো?”
পদ্মাসেতু আমরা নির্মাণ করবোই
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাংক চলে গেছে, অন্যান্য সহযোগীরাও চলে যেতে পারে। মালয়েশিয়া প্রস্তাব দিয়েছে। পিপিপি বা অন্য যে কোনোভাবেই হতে পারে। তবে যেই প্রস্তাব দিক তা আমার দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জনগণের স্বার্থে হতে হবে।”
“পদ্মাসেতু আমরা নির্মাণ করবোই। ক্ষমতায় এসে বিশ্বমন্দার মধ্যেও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি করতে পেরেছি, পদ্মাসেতুও করতে পারবো।” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকসহ আরো যারা আছে তারাও ঋণ দেওয়া বন্ধ করলে করতে পারে। করুক। পদ্মা সেতু করার জন্য ১৬ কোটি মানুষ আছে। দেশের বাইরে ৮০ লাখ প্রবাসী বাঙালি আছে।”
তিনি বলেন, “গতকালও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর, ইআরডি সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমি খোঁজ নিয়েছি, ব্যাংকে রির্জাভ আছে। ১/২ বিলিয়ন ডলার খরচ করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে।”
পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আগামী ৮ জুলাই অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি বিস্তারিত বলবেন বলেও জানান।