কঠোর পরিশ্রম আর সততার সঙ্গে ব্যবসা করে প্রয়াত দেশ বরেণ্য ভাষ্কর শিল্পী নিতুন কুণ্ডু তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন অটবি। তার মেধা ও শ্রমে একটি ফার্নিচারের দোকান বিস্তৃত হয় দেশজুড়ে। বাড়ে শাখা-প্রশাখা। নিতুন কুণ্ডুর স্বপ্নের এ প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যবসায়িক মুনাফার জায়গা ছিলো না। ছিলো তার আবেগ অনুভূতি আর অস্তিত্ব জুড়ে। এখন অটবি মানেই প্রতারণার অপর নাম। ভূয়া ডিসকাউন্ট আর দায়সারা ফিটিং ও লাগামহীন দামের কারণে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অটবি ফার্নিচার থেকে। মাস জুড়ে ভুয়া ডিসকাউন্ট দিয়েও ক্রেতা ধরে রাখতে পারছে না নিতুন কুণ্ডুর গড়া এ প্রতিষ্ঠানটি। আর এর প্রধান কারণ পারিবারিক কোন্দল। কোন্দলে জর্জরিত অটবি ফার্নিচার।
নিতুন কুণ্ডের এক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “নিতুন কুণ্ডু মৃত্যুর পূর্বে দু`সন্তানকে বলে গিয়েছিলেন, তার শ্রমে ঘামে গড়া এ প্রতিষ্ঠান যেনো টিকে থাকে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যেনো ব্যবসায়িক মুনাফা হাসিলের চেষ্টা না করা হয়। দু` সন্তানের মাঝে কোনো বিবাদ যেনো না থাকে।“
কিন্তু সে কথা মানেননি দুই ভাই-বোন। ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য এখন তাদের কোন্দল চরমে। ঘরের কোন্দল দেখা দিয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। আর এ কাজে ছেলে অনিমেষ কুণ্ডুই প্রধানত দায়ী।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে নিতুন কুণ্ডুর মৃত্যুর পরই অটবি ফার্নিচারে শুরু হয় তার সন্তান বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনিমেষ কুণ্ডুর স্বেচ্চাচারিতা।
দাদা-দিদি গ্রুপ
নিতুন কুণ্ডুর মৃত্যুর পর তার সম্পদ নিয়ে তার দু’ সন্তান অনিমেষ কুণ্ডু এবং অমিতি কুণ্ডুর মধ্যে বিবাধ দেখা দেয়। বর্তমানে অটবি ফার্নিচারে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন নিতুন কুন্ডুর স্ত্রী ফাল্গুনি কুণ্ডু। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে আছেন অনিমেষ কুণ্ডু ও অমিতি কুণ্ডু দুজনই।
এই দুই জনকে ঘিরে বর্তমানে দুটি গ্রুপ রয়েছে। অটবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে যা ‘দাদা-দিদি গ্রুপ’ নামে পরিচিত। দাদা গ্রুপটি অনিমেষ কুণ্ডু এবং দিদি গ্রুপটি অমিতি কুণ্ডুর।
নিতুন কুণ্ডের স্ত্রী ফাল্গুনি কুণ্ডু চেয়ারম্যান পদে থাকলেও মূলত অটবিতে প্রভাব বিস্তার করছেন অনিমেষ কুণ্ডু ও তার লোকজন। ভাইয়ের কাছেও অমিতি কুণ্ডু অনেকটা কোনঠাসা। কারো মতামত পরোয়া না করে এককভাবেই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন অনিমেষ।
এ বিষয়ে অনিমেষ কুণ্ডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় “পারিবারিক বিষয় ও আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।“
অটবিতে নিতুন কুণ্ডুর সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, অনিমেষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানের সমস্ত সুনাম বিসর্জন হচ্ছে। ভুয়া ডিসকাউন্ট, অতিরিক্ত দাম এবং নিম্নমানের পণ্য দিয়ে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের সঙ্গে যেভাবে প্রতারণা করছে তা যদি বন্ধ না হয় তাহলে খুব বেশি দিন লাগবে না অটবি ধ্বংসের পথে যেতে।