প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাদের আবেদনক্রমে মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১টায় ঢাকার ৭ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ আগামী ২৪ জুলাই অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য করেন।
আসামিপক্ষে রোজার ঈদের পরে মামলার তারিখ নির্ধারণের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সংক্ষিপ্ত সময় দেবার জন্য আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক ২৪ জুলাই দিন ধার্য করলে উপস্থিত বিএনপিপন্থী কয়েক আইনজীবী আদালতের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করেন। তারা আদালত কক্ষেই হই-হট্টগোল করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের নেতারা আদালতে হাজির হন।
মামলার আসামি ৫ এমপি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব) অলি আহমেদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সংসদ অধিবেশন চলায়, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস অসুস্থ থাকায় এবং কামরুজ্জামান রতন দেশের বাইরে থাকায় আদালতে হাজির হননি বলে উল্লেখ করে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এ মামলার ৪৬ আসামির মধ্যে মির্জা ফখরুলসহ ৩৯ জন আসামিই জামিনে আছেন। ৪ জন পলাতক ও ৩ জন কারাগারে আটক আছেন।
তবে জামিনে থাকা ৩৯ আসামির মধ্যে ২০ জন আদালতে হাজির ছিলেন। ৮ জন সময়ের আবেদন করেন। অপর ১১ জন এ মামলায় জামিনে থাকলেও অন্য মামলায় কারাগারে আটক আছেন। তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেন, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার ওরফে জসিম মামলার শুরু থেকেই পলাতক। পুড়ে যাওয়া বাসটির ড্রাইভার সোহেল মিয়া এবং কন্ডাক্টর জসীম ও মানিক রতন কারাগারে আছেন।
অভিযোগ গঠনের শুনানিতে মঙ্গলবার আদালতে হাজির হন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাছির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা লুৎফর রহমান ওরফে এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, তিতুমীর কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইসমাইল খান শাহীন, মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মান্নান হোসেন শাহীন।
এ মামলায় জামিনে থেকেও অন্য মামলায় কারাগারে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন্নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ইয়াছিন আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু ও খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক মিশনার ইউনুছ মৃধা।
গত ১০ মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটিতে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এরপর ২৭ মে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বারকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
আসামিপক্ষে শুনানিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, খোরশেদ আলম, মোহসীন মিয়া, ইকবাল হোসেন, ওমর ফারুক ফারুকীসহ দুইশতাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার।