রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর তিন শ মিটার উত্তরে যমুনা নদীর ওপর দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু তৈরি করা হবে। ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সেটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে ২০২৪ সালের আগস্টে। দেশের দ্বিতীয় ওই রেলসেতু হবে ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইন। যেটি দিয়ে এক শ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
আজ শনিবার দুপুরে নীলফামারী জেলার চিলাহাটিতে ভারত-বাংলাদেশ রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ভারতের হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর অথবা কাছাকাছি সময়ে এই পথটি (চিলাহাটি-হলদিবাড়ি) উম্মুক্ত হবে। প্রাথমিক অবস্থায় মালবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমেই উম্মুক্ত হবে। ঢাকা থেকে যেমন কলকাতা পর্যন্ত মৈত্রী একপ্রেস এবং খুলনা থেকে কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে, ঢাকা থেকে আরেকটি ট্রেন ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথ ধরে চলাচল করতে পারে সেটি আমাদের পরিকল্পনায় আছে। ভারতীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এটি আমরা আশা করছি আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে অথবা কাছাকাছি কোনো সময় যাত্রিবাহী আরেকটি ট্রেন চলাচল উম্মুক্ত করার।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রেলের উন্নয়নে কাজ করছেন। আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন দিয়ে রেল চলবে। পৃথিবীর উন্নতমানের আধুনিক ট্রেন চালু করা হবে।
মন্ত্রী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিলাহাটি রেল স্টেশন এলাকায় স্টেশনের মূল ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন শেষে রেলের গ্যাং কারযোগে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্তের শূন্য রেখা পর্যন্ত যান। সেখানে তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি সেখান থেকে চিলাহাটি স্টেশনে ফিরে আসেন।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মামুনুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সহিদুল ইসলাম, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, ডোমার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালেক সরকার, রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহীম, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান সিহাব প্রমুখ।
দুই দেশের সীমান্তের জিরো রেখায় দীপাবলী উপলক্ষে ফুলেল তোরা ও মিষ্টি দিয়ে মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পক্ষে এসি সিদ্ধার্থ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চিলাহাটি রেল স্টেশন চত্বরে ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। বাংলাদেশ অংশে রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষে গত ২৭ অক্টোবর ওই পথের জিরো রেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলের একটি ইঞ্জিন সফলভাবে পরীক্ষামূলক চলাচল করে। বাংলাদেশ অংশে রেললাইন স্থাপনের কাজটি করছেন ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে হলদিবাড়ি থেকে ভারতীয় সীমান্তের ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ করে গত ৮ অক্টোবর ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের অংশে শূন্য রেখা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক রেলের একটি ইঞ্জিন চালায়।
অবিভক্ত ভারতের রেল যোগাযোগের এটিই প্রধান পথ ছিল। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এটি চালু ছিল। পাক-ভারত যুদ্ধের পর সেটি বন্ধ হয়। সেই রেল যোগাযোগটি ৫৫ বছর পর চালু করতে উদ্যোগ নেয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে উচ্ছেদ হওয়া রেলের জায়গায় বসবাসকারী ৭৮টি পরিবার তাদের পূর্ণবাসনের দাবিতে সীমান্তের জিরো পয়েণ্টে অবস্থান নেন। মন্ত্রী তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বস দেন।