রেমিটেন্সের জন্য দুই শতাংশ ক্যাশ ইন্সেন্টিভ প্রদানসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভে সাম্প্রতিকালের মধ্যে সবোর্চ্চ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে মোট রিজার্ভের পরিমান ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা সর্বকালের মধ্যে সবোর্চ্চ রেকর্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চারমাসে প্রবাসীরা ৮,৮২৫.৬৪ মিলিয়ন মাকির্ন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে পাঠানো রেমিটেন্সের চেয়ে ৪৩.২৪ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পযর্ন্ত চার মাসে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ৬,১৬১.০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠায়।
পাশাপাশি মাসিক রেমিটেন্স প্রবাহ জুলাই মাসে ছিল সবোর্চ্চ। এ মাসে প্রবাসীরা দেশে ২,৫৯৮. ২১ মিলিয়ন ডলার দেশে পাঠায়।
অর্থমন্ত্রী এএইসএম মুস্তফা কামাল দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় দেশবাসীর পক্ষ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তবে অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিনমাসে অবিশ্বাস্য রকম রেমিটেন্স প্রবাহের খবরে অনেকে খুশি হতে পারেননি। তারা নানা সমালোচনা করছেন, যা আদৌ ঠিক নয়। তাদের অভিযোগ কখনো ধোপে টিকবে না। এমনকি কিছু আর্ন্তজাতিক সংস্থাও তাদের সাথে সুর মিলাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, তবে আমি রেমিটেন্স আহরণ প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম। বিশ্বব্যাংক এখন বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং রেমিটেন্স আহরণে বাংলাদেশ অষ্টম স্থান অর্জন করবে।
অর্থমন্ত্রী কামাল আরো বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হার হবে ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান মুখপাত্র এম সিরাজুল ইসলাম বাসস’র সাথে আলাপকালে বলেন, দেশে বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই শতাংশ ইন্সেন্টিভ দেয়াসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় পদক্ষেপে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এখন বৈধ চ্যানেলে তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে রেমিটেন্স প্রবাহে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সরকার ২০১৯-২০ জাতীয় বাজেটে রেমিটেন্সের ওপর দুই শতাংশ ক্যাশ ইন্টেন্সিভ ঘোষণা করে। এতে বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য যায়। সরকার ২০২০-২১ অর্থ বছরেও রেমিটেন্সের ওপর ২ শতাংশ ইন্টেন্সিভ প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ১৮,২০৫. ০১ মিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে ১০.৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশে রেমিটেন্স আসে ১৬,৪১৯. ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স আনতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাংকগুলো কাজ করছে।
তিনি বলেন, বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে প্রক্রিয়া আরো সহজ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা এ জন্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করছি।
বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ বলেন, সরকার দেশে রেমিটেন্স বাড়াতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে সরকার ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ইন্টেন্সিভ ঘোষণা করে। সরকারের এই ঘোষণায় প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হয় এবং তারা এখন ইন্টেন্সিভের জন্য বৈধ চ্যানেলেই দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে।
কাতারে কর্মরত কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগামের জনৈক রাসেল মজুমদার রেমিটেন্স প্রদানকারিদের জন্য দুই শতাংশ হারে ইন্টেন্সিভ প্রদান করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবাসে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের আরো ভাল কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা গত অক্টোবর মাসে দেশে ২,১১২.৪৪ মিলিয়ন মাকির্ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। এই অর্থ দেশের ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে এসেছে। ব্যাংকগুলো হলো, অগ্রনী, জনতা, রুপালী, সোনালী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংক। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমেও ৩৩.৫৬ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১.৯২ মিলিয়ন, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৭৯.৬৮ মিলিয়ন, রুপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৬.৬৩ মিলিয়ন, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩৪.২৫ মিলিয়ন ও বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে ০.১১ মিলিয়ন মাকির্ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এ ছাড়া বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১,৬০৪.৬৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৭৪৮.৫৭ মিলিয়ন ডলার ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৩৮.১৫ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১.৬০ মিলিয়ন ডলার।