আগামী রোববার (৮ নভেম্বর) মিয়ানমার নির্বাচনের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে বেগবান করতে চায় বাংলাদেশ। প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য এই সংক্রান্ত ত্রিপক্ষীয় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার কমিটির বৈঠকের জন্য বেইজিংকে অনুরোধ করেছে ঢাকা। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় দিল্লিকে যুক্ত হওয়ার অনুরোধও করেছে ঢাকা।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য প্রত্যাবাসন এবং এ জন্য আসিয়ান প্লাস প্লাস দেশগুলোর সহায়তা আমরা চেয়েছি। আসিয়ান ছাড়া নিকট প্রতিবেশী চীন ও ভারত, এবং দূরবর্তী প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে এটি আরও কার্যকর হবে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি এই উদ্যোগে সামিল হওয়ার জন্য এবং ওইদেশ যুক্ত হলে আমরা স্বাগত জানাবো।’
একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ফিরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা আনা প্রয়োজন এবং বেশি সংখ্যক দেশ সম্পৃক্ত হলে এই আস্থা অর্জনে সহজ হবে।’
৮ নভেম্বর মিয়ানমারের নির্বাচনের দিকে বাংলাদেশ তীক্ষ্ম নজর রাখছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা আশা করি নির্বাচনের পরে ওই দেশে গণতন্ত্র সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে। পরে যে উদ্যোগগুলো থেমে আছে সেগুলো নিয়ে এগিয়ে যাবো।’
নির্বাচনের পরে কী হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারকে নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠকও অনেক মাস ধরে হচ্ছে না। আমরা চীনকে অনুরোধ করেছি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নির্বাচনের পরে আয়োজন করার জন্য।’
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে একটি কার্যকরী ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই।’
মিয়ানমারের সঙ্গে চীন যোগাযোগ রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আস্থা তৈরি করতে হবে।
এর জন্য জাতিসংঘের যেসব সংস্থা মিয়ানমারে রয়েছে তাদেরকে আরো উদ্যোগী হওয়ার জন্য রাখাইনে কাজ করার সযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন সচিব।
তিনি বলেন, ‘আস্থা তৈরির জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে, জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা দেওয়ার জন্য অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সবার সহায়তা নিয়ে সেটি করতে পারে।’
আন্তর্জাতিক কোর্টে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এটিকে আস্থা অর্জনের একটি ব্যবস্থা হিসেবে দেখছি। যারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করেছে তারা যদি দায়বদ্ধতার আওতায় আসে তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মনোবল বৃদ্ধি পাবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সহায়তা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নয়, রাখাইনে যারা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করেছিল তাদেরকেও দায়বদ্ধতায় আনা দরকার।’
এই সমস্যার অনেকাংশ সমাধান হবে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মূল লক্ষ্য শাস্তি দেওয়া নয় বরং রোহিঙ্গাদের আস্থা বৃদ্ধি করা।’