অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, বিশ্বব্যাংক অসমর্থিত বা অসম্পূর্ণ অভিযোগের ভিত্তিতে একটি দেশকে অপবাদ দিতে পারে না বা দেশের মর্যাদাহানি করতে পারে না।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি বিশ্বব্যাংক যে বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছে তাতে এই দেশটাকে অপমান করা হয়েছে। তারা যে অপবাদ দিয়েছে তার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। তারা যে বলেছে বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি পরিহারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেননি সেটাও ঠিক ন| আমরা যেকোন মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত হব বলে আশা রাখি।”
অর্থমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, এই অর্থবছরে আমরা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করবো।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জোর গলায় বলতে পারি পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোথাও কোনো অপচয়-অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের রুটিন পদ্ধতির বাইরে গিয়ে অত্যন্ত নমনীয়ভাবে বিশ্বব্যংাকের সব সুপারিশ বিবেচনা করেছি। এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য প্রভাবশালী সদস্যদের সঙ্গেও অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে দুর্নীতির সমঝোতা স্মারক সই করতে চেয়েছেন। আমার কাছে এটি অপমানজনক মনে হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনার শীর্ষে যারা রয়েছেন তারা জানেন যে আমরা দুর্নীতি দমনের প্রচেষ্টা কোনো ক্ষেত্রেই কম ছিলো না। সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রবার্ট জওয়েলিক তার মেয়াদকালে বিষয়টির সুরাহা করার উদ্দেশ্যে একটি অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশেষভাবে বিপর্যস্ত করেছে।”
তিনি বলেন, “আমি সবসময় আশাবাদী মানুষ। আমার বিশ্বাস বিশ্বব্যাংক এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবেন। আমি আরো মনে করি যে, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত এবং বিজ্ঞপ্তি বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করে এই প্রকল্পের বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্বব্যাংকে আমাদের নির্বাহী পরিচালক এ বিষয়ে এরইমধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রকল্পের অন্যান্য অর্থায়নকারীদের সঙ্গে আমরা এরইমধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা নিয়েছি।”
এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেন, “গত ৩০ জুন সারাদেশ জেনেছে যে, পদ্মাসেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের যে ঋণচুক্তি করেছিলো সেটি বাতিল করেছে। এজন্য কারণ দর্শিয়ে যে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির সম্ভাবনা আছে এবং এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি।”
মুহিত বলেন, “বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ৪০ বছরের চেয়েও বেশি। দীর্ঘ পথচলাকালে তাদের সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য হয়েছে এবং বিস্তর তর্ক-বিতর্কও হয়েছে। শেষ বিচারে বিশ্বব্যাংককে আমরা একটি প্রগতিশীল দাতা সংস্থা এবং অন্তরঙ্গ সহযোগী হিসেবে পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তারা ৭টি প্রকল্পে দুর্নীতির আলামত পেয়েছে। সেগুলো হলো- ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, নলকা-হাটিকামরুল-বনপাড়া প্রকল্প, দেবগ্রাম-প্রগতি সরণি সংযোগ সড়ক প্রকল্প, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী টোল প্লাজা প্রকল্প, ক্রাশ পোগ্রামের আওতায় ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের ৩য় পাইলট প্রকল্প এবং পোস্ট লিটারেসি অ্যান্ড কন্টিনিউয়িং এডুকেশন ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প। এসব প্রকল্পে দুর্নীতি হয় চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের বিশ্বব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয় যে, বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ খাতে তারা কোনো সহায়তা দেবে না।”
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিশ্বব্যাংককে অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করা হয় বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, বিশ্বব্যাংক ২০১০ সালের শেষ দিকে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করে।
পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশেষ সঙ্কট সম্পর্কে সারা জাতিকে সরকারের অবস্থানটি প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরতেই এই বিবৃতি।’
বিবৃতি প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা প্রায় চার বছর ধরে কথাবার্তা বলছি। আসলে ৯০’ এর দশকে যখন দেখা গেল যে, অবশেষে যমুনা সেতু নির্মাণ করা যাবে তখন থেকেই পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবিটি জোরদার হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকার তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে ঘোষণা করে যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ সবিশেষ অগ্রাধিকার পাবে।”
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থানটি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিই। আমি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছি যে, বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য এবং সেখানে বাংলাদেশ সরকার যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলে বিশ্বব্যাংক যেকথা বলেছে সেটিও সঠিক নয়।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পত্রালাপ হয়েছে সেগুলো তদন্তের খাতিরে এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রকাশ করিনি। প্রাসঙ্গিকভাবে যেসব বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে ভ্রান্তিমূলক তথ্য এসেছে শুধু সেটুকুই শুধরিয়েছি। আমার উদ্দেশ্যে হচ্ছে এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের উদ্বেগ ও ঔৎসুক্য নিরসন করা।”
পদ্মাসেতু প্রকল্প বিষয়ে সবিস্তারে তথ্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাব ২০০৭ সালে একনেক অনুমোদন করে, তখন থেকেই সেতু নির্মাণের প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। বর্তমান সরকার এ প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রাখে এবং জানুয়ারি মাসেই এই নকশা প্রণয়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ কাজটি ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়। বর্ষশেষে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পূর্ণ হয় এবং তখন থেকেই এই প্রকল্পের জন্য আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা চাই।”
তিনি জানান, ২০১১ সালের প্রথমার্ধেই চার উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্যচুক্তি আমরা সম্পাদন করি। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি সই হয়। ১৮ মে জাপান সরকারের জাইকার সঙ্গে ৪১ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলার, ২৪ মে আইডিবি’র সঙ্গে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার এবং ৬ জুন এডিবি’র সঙ্গে ৬১ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন হিসাব করা হয়, প্রকল্পের মোট খরচ হবে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রায় চল্লিশ বছরের উল্লেখ করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘১৯৭২ সালে আমরা বিশ্বব্যাংকের সদস্য হই এবং তখন থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৬৮০ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা পাই। ২০১১ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আমরা কোন এক বছরের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা লাভ করি ৩১০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে ৪১টি প্রকল্প এবং কার্যক্রমের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তার পরিমাণ ৪২৩ কোটি মার্কিন ডলার।’
একটি বিশেষ দরপত্রদাতাকে কাজ দেওয়ার পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের
বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, “২০১০ সালের এপ্রিল মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের আগ্রহের বহিপ্রকাশ হিসেবে বাংলাদেশ তাদের সম্মতি নিয়ে মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। এ দরপত্র মুল্যায়ন করে আমরা যখন আমাদের সুপারিশ বিশ্বব্যাংকে পাঠাই, তখন তারা প্রথমে একটি বিশেষ দরপত্রদাতাকে পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দেয় এবং পরবর্তীতে জানায় যে, সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, বিধায় নতুন দরপত্র আহ্বান করা উচিত। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ নিয়ে ২০১০ সালের অক্টোবরে নতুন ডিজাইনের অভিজ্ঞতার শর্ত দিয়ে আমরা দরপত্র পুন আহবান করি।”
আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও জানান, বিশ্বব্যাংকে ২০১১ সালের মার্চ মাসে এই দরপত্র মূল্যায়ন করে আমরা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাকযোগ্য নির্দিষ্ট করে সুপারিশ পাঠাই। বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপন না করে ‘সিআরসিসি’ নামক একটি চীনা কোম্পানিকে প্রাকযোগ্যতায় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করার জন্য আমাদের তিন তিন বার পরামর্শ দেয়। এ পরামর্শ আমাদের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটি গ্রহণ করেনি এবং সেতু বিভাগ অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে, চীনা কোম্পানি সিআরসিসি কখনো পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেনি এবং ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামক তাদের বাংলাদেশি সহযোগী এ বিষয়ে জালিয়াতি করেছে।
তিনি জানান, এই জালিয়াত প্রতিষ্ঠান চীনে একটি দফতর স্থাপন করে সেখান থেকে সিআরসিসি-এর নামে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। সিআরসিসি এই তথ্য জানার পর লিখিতভাবে জানিয়ে দেয় যে, তারা এই কাজের জন্য আগ্রহী নয়। একইসঙ্গে তারা ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সহযোগি হিসেবে বরখাস্ত করে। ভেনচুরা ইন্টারন্যাশনালের কর্তাব্যক্তি এই মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক সিআরসিসি’র অভিযোগ যথাযথ পরীক্ষা না করেই এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বার বার পরামর্শ দেওয়ার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় তিন মাস পিছিয়ে যায়। আমরা জানি না যেসব ব্যক্তি এই জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কি না।’
অর্থমন্ত্রী জানান, এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের ইনট্রিগিটি দফতরের দুই কর্মকর্তা ঢাকায় এসে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে তদন্ত করেন। কতিপয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে এক আলোচনায় তারা যোগ দেন এবং সেখানে অত্যন্ত অশোভন গুজব রটানোর সূত্রপাত করেন। এ আসরে হাওয়ার্ড ডিন নামক এক কর্মকর্তা কোন সম্মানিত ব্যক্তিবিশেষ সম্বন্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এতে আসরে উপস্থিত এক সদস্য শক্তভাবে প্রতিবাদ করেন এবং তাঁকে এরকম রটনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। তিনি তাঁকে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতেও চ্যালেঞ্জ করেন। অবশেষে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং সেজন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেন। আমরা এ বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংককে জানাই। কিন্তু আমরা আজও জানি না বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে কোন যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছেন বা তদন্ত রুজু করেছেন।
বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, আগস্ট মাসে বিশ্বব্যাংক আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে, সেতু নির্মাণের পর্যবেক্ষক পরামর্শক নিযুক্তির জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয় সেখানে এসএনসি-লাভালিন নামক এক কানাডীয় প্রতিষ্ঠান দরপত্র পেশ করে। তাদের বিরুদ্ধে কানাডায় তদন্ত হচ্ছে এবং সেজন্য ও অন্যান্য কারণেও বিশ্বব্যাংক আপাতত পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত রাখতে চায়।
তিনি জানান, সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের এশিয়া বিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে একটি ঝটিকা সফরে এসে জানান, তাদের তদন্তে শুধু নির্মাণ কাজের পরামর্শক নয়, নির্মাণ কাজের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন বিষয়েও কিছু অনিয়ম প্রতীয়মান হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন তারা অচিরেই আমাদের কাছে পাঠাবেন। সেই সময় বিশ্বব্যাংকের ওই ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও আমাকে এই সঙ্কট থেকে উত্তোরণের একটি প্রস্তাবও প্রদান করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সফরে গেলে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুত চিঠি এবং এরসঙ্গে একটি প্রতিবেদনও আমার কাছে হস্তান্তর করেন। আমি তাদের বলি, আমার মনে হয় আমরা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তের জন্য পাঠাবো এবং একইসঙ্গে দুর্নীতিতে লিপ্ত এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্তও করতে পারি। ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে অভিযোগটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়ে দেই। পরে জানতে পারি, দুর্নীতি দমন কমিশন নিজে থেকেই পদ্মাসেতুর ব্যাপারে জুলাই মাস থেকেই এই প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে।’
তিনি জানান, ‘এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন সেতু নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বিবেচনার বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকে পাঠিয়ে দেন। তারা এই দরপত্র গ্রহণে এবং মূল্যায়নে কোন দুর্নীতির আলামত পাননি বলে তাদের প্রতিবেদন পেশ করেন। বিশেষ করে এই দরপত্র মূল্যায়নে অভিযুক্ত সাকো কোম্পানির কোন সম্পৃক্ততা তাদের তদন্তে প্রতিভাত হয়নি বলে তারা জানালেন। বিশ্বব্যাংক তখন এই বিষয়ে আরও অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে উপদেশ দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কাছে যে সাক্ষী-সাবুদ আছে যে সম্বন্ধে কোন তথ্য দিতে তারা প্রথা অনুযায়ী অস্বীকৃতি জানায়।
অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, “বিশ্বব্যাংক চিঠিতে তিনটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। যেমন যেসব সরকারি কর্মকর্তা সম্বন্ধে এসএনসি-লাভালিন কর্মকর্তার ডায়েরির ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের ছুটি দেওয়া, দুর্নীতি দমন কমিশনে এই তদন্তের জন্য বিশেষ টিম গঠন করা এবং তদন্তের সর্ববিষয়ে বিশ্বব্যাংকের নিয়োজিত একটি প্যানেলকে অবহিত রাখা এবং তাদের উপদেশ গ্রহণ করা।”
তিনি বলেন, “এই প্রস্তাবগুলোর সমস্যা হচ্ছে যে, কোন কিছু প্রমাণিত হওয়ার আগেই দুর্নীতির অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া। সেজন্য তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে আমরা বিভিন্ন উপায়ে তাদের উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করি।”