মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেনা নিটোর ‘জয়লাভ’

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেনা নিটোর ‘জয়লাভ’

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল ইন্সটিটিউশনাল রেভ্যুলুশনারি পার্টির (পিআরআই) প্রার্থী এনরিক পেনা নিটো বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে জয়লাভ করেছেন। রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। এছাড়া সরকারিভাবে ঘোষিত আংশিক ফলাফলেও প্রতিদ্বন্দ্বী নিকটতম প্রার্থীর থেকে সুষ্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন নিটো।

সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী তিনি মোট ভোটের ৩৮ শতাংশ লাভ করেছেন। তবে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওবরাডোর এখনও পরাজয় স্বীকার করেন নি। নিজের পরাজয় স্বীকার না করে বলেন, ‘শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি।’ এছাড়া পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশের পূর্বে কোনো মন্তব্য করবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বামপন্থি ডেমোক্রেটিক রেভ্যুলুশন পার্টির মনোনীত প্রার্থী ম্যানুয়েল লোপেজ সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন।

২০০৬ সালের নির্বাচনেও দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন তিনি। ওই নির্বাচনেও বিজয়ী প্রার্থী ফেলিপ ক্যালদেরনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাননি তিনি। এমনকি অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের পর কয়েকমাস ধরে মেক্সিকোর রাজপথে সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তিনি।

তবে নির্বাচনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির জোসেফিনা ভাজকুয়েজ মোটা পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভোটগ্রহণের সময় মেক্সিকোজুড়ে ভোটকেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। নির্বাচনে মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক চক্রগুলোর সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

এদিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিআরআই দলের প্রধান কার্যালয়ে উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায়।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পেনা নিটো এসময় উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, ‘আমরা সবাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছি, মেক্সিকো জয়ী হয়েছে।’

তাকে ভোট দেওয়ার জন্য মেক্সিকোর সাধারণ ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তার সরকার নতুন পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করবে।

মেক্সিকোতে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় মূলত দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা এবং মাদকের বিরুদ্ধে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ প্রধান স্থান পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে পেনা নিটো বলেন, ‘সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা সন্ধি নয়।’

উল্লেখ্য,২০০০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পিআরআই পার্টি টানা ৭১ বছর মেক্সিকোর ক্ষমতায় ছিলো। মাদক চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এবং অন্যান্য কেলেঙ্কারির কারণে ওই নির্বাচনে পরাজিত হয় দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

রোববারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার পাশাপাশি মেক্সিকান ভোটাররা একই সঙ্গে কংগ্রেসনাল ডেপুটি এবং কয়েকটি রাজ্যের গর্ভনর নির্বাচন করতেও ভোট দিয়েছেন। পাশাপাশি মেক্সিকো সিটির  ভোটাররা নগরীর মেয়র নির্বাচন করতেও ভোট দেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে ভোটাররা কংগ্রেসের ৫০০জন সদস্য, ১২৮জন সিনেটর, মেক্সিকো সিটির মেয়র এবং ছয় জন রাজ্য গভর্নর নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। প্রতি ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট। একবার নির্বাচিত হলে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না দেশটির প্রেসিডেন্টরা।

নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে ৭ শ’জন বিদেশী পর্যবেক্ষক বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

বিজয়ী প্রার্থী পেনা নিটো মেক্সিকো প্রদেশের গর্ভনর থাকা অবস্থায় জনগণের  কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন।

এদিকে গতকালই মেক্সিকোর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফেলিপ ক্যালদেরন বিজয়ী প্রার্থী পেনা নিটোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি ডিসেম্বরে অভিষেকের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ক্যালদেরন।

আন্তর্জাতিক