পৃথিবীতে অর্ধকোটি টেস্ট টিউব শিশুর জন্মলাভ

পৃথিবীতে অর্ধকোটি টেস্ট টিউব শিশুর জন্মলাভ

পৃথিবীতে প্রথম টেস্টটিউব শিশু হিসেবে লুসি ব্রাউনের জন্মলাভের ৩৪ বছর কেটে গেছে। তিনি যখন জন্মলাভ করেন তখন বিশ্বে এটিকে একটি অভাবনীয় ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু টেস্টটিউবে শিশু জন্ম দেওয়ার প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের কারণে বিশ্বে এত অল্প সময়ের মধ্যেই এ পদ্ধতিতে জন্ম নিয়েছে ৫০ লাখ শিশু। এদেরকে এখন বলা হচ্ছে টেস্টটিউব জেনারেশন।

কৃত্রিম পদ্ধতিতে বা টেস্ট টিউবে শিশু জন্ম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সামনে রেখে পরিচালিত এক গবেষণায় সম্প্রতি এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

তুরস্কে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয় গবেষণা থেকে প্রাপ্ত এ তথ্য। সম্মেলনে অংশ নেওয়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কৃত্রিম পদ্ধতি বা টেস্টটিউব শিশু জন্মলাভের ইতিহাসে এই অর্জনকে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব শিশু হিসেবে জন্ম নেয় লুসি ব্রাউন।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং অ্যাসিস্টেড রিপ্রডাক্টিভ টেকনোলজিস (ইকমার্ট) টেস্টটিউবে শিশু জন্মলাভের এ পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে। তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউমান রিপ্রডাকশন অ্যান্ড এমব্রাইওলোজি সম্মেলনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

পরিসংখ্যানে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টেস্টটিউব  শিশু জন্মলাভ করেছে। এ ব্যাপারে ইকমার্টের প্রধান ড.ডেভিড অ্যাডামসন বলেন, ‘এই প্রযুক্তি সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতিদের জন্য খুবই সাফল্যময় বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত্য লাখ লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে।’  ইকমার্টের মতে প্রতি বছর এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশুর জন্ম দেওয়া হয় পৃথিবীতে।

এ ব্যাপারে হ্যামারস্মিথ হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং টেস্টটিউব শিশু জন্মদান বিভাগের পরিচালক স্টুয়ার্ট ল্যাভেরি বলেন, টেষ্টটিউব শিশুর জন্মদান এখন মূলধারার একটি বিষয়। সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতিদের এখন আর এই পদ্ধতি ব্যবহারে লজ্জিত হতে হয় না।’

তবে তিনি সর্তকবার্তা উচ্চারণ করে বলেন, ‘ এই পদ্ধতির উচ্চ সাফল্যহারের ওপর নির্ভর করে সন্তান জন্মদানে সক্ষম দম্পতিদের বিলম্বে সন্তান জন্ম দেওয়ার রাস্তা বেছে নেওয়া উচিৎ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষই ভেবে থাকে বিলম্বে সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হলে টেস্ট টিউব পদ্ধতি তো আছেই।‘

তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, বেশি বয়সের ক্ষেত্রে টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে শিশু জন্মদানের সফলতার হারও খুব বেশি নয়।

এ ব্যাপারে শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রোলজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড.অ্যালান পেসি বলেন, ‘আমার মতে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে টেস্টটিউব শিশুর জন্মলাভ ৫০ লাখে পৌঁছেছে। তবে ১০ বা ২০ বছর আগেও এ বিষয়টির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বর্তমান অবস্থায় ছিলো না।’

তবে তিনিও সর্তকবার্তা উচ্চারণ করে বলেন, ‘ সবার জন্য টেস্টটিউবই নিশ্চিত সমাধান নয় এবং যাদের পক্ষে প্রথম জীবনেই সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব টেস্টটিউবের ওপর ভরসা না করে তাদের স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই সন্তান জন্ম দেওয়া উচিৎ। টেস্টটিউবে শিশুর জন্ম পদ্ধতি তাদেরই ব্যবহার করা উচিৎ যাদের এটি সত্যিকারের প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক