ধারাভাষ্য কক্ষে মাইক হাতে সুনিল গাভাস্কার বলেই দিলেন, ‘আইপিএল অসম্ভব টুর্নামেন্ট, অবিশ্বাস্য!’ একটুও ভুল বলেননি গাভাস্কার, অসম্ভবকে সম্ভব করা কিংবা অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের চমকে দেয়ার কাজটা এবার দারুণভাবে করে চলেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)।
মাত্র ১২৬ রানের পুঁজি নিয়েও ১২ রানে জিতে গেছে ইলেভেন পাঞ্জাব। জয়ের খুব কাছে পৌঁছেও শেষপর্যন্ত বিব্রতকর এক পরাজয়ই দেখল হায়দরাবাদ। এ জয়ে প্লে-অফের সম্ভাবনাও আর বাড়িয়েছে প্রীতি জিনতার দল।
অথচ পাঞ্জাবের করা ১২৬ রানের জবাবে একপর্যায়ে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই ১০০ রান করে ফেলেছিল হায়দরাবাদ। তাদের জয় যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখনই মরণ কামড় বসায় পাঞ্জাব। অবিশ্বাস্য বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়ে মাত্র ১১৪ রানেই তারা অলআউট করে দিয়েছে হায়দরাবাদকে।
অর্থাৎ শেষের ৭ উইকেট মাত্র ১৪ রানে হারিয়েছে হায়দরাবাদ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে মাত্র ৪ রান করতেই নিজেদের শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারের দল। মিডল ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নজিরবিহীন ব্যর্থতায় এত সহজ ম্যাচটিও জিততে পারেনি হায়দারাবাদ।
রান তাড়া করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এবং ডেভিড ওয়ার্নার। রানের চাহিদা যেখানে ছিল ওভারপ্রতি ছয়ের একটু বেশি, পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভার থেকে প্রায় ৯ গড়ে ৫২ রান তুলে নেন ওয়ার্নার ও বেয়ারস্টো।
কিন্তু ইনিংসের সপ্তম ওভারে অধিনায়ক ওয়ার্নার ফিরে গেলেই মোড়ক লেগে যায় হায়দরাবাদের ইনিংসে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকা ওয়ার্নার আউট হন ৩ চার ও ২ ছয়ের মারে সাজানো ২০ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে। শেষপর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে হায়দরাবাদের ইনিংসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস।
এক ওভার পর সাজঘরের পথ ধরেন চারটি চারের মারে ২০ বলে ১৯ রান করা বেয়ারস্টোও। পরের ওভারে ফিরে যান আব্দুল সামাদও, করেন ৫ বলে ৭ রান। তিন ওভারে ৩ উইকেট হারালেও, ৯ ওভারে ৬৭ রান করে ফেলায় শেষের ৬৬ বলে মাত্র ৬০ রান বাকি ছিল হায়দরাবাদের।
পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় এ সহজ সমীকরণও পূরণ করতে পারেনি আইপিএলের ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। তবু চতুর্থ উইকেট জুটিতে আশা জাগিয়েছিলেন মনিশ পান্ডে ও বিজয় শঙ্কর। দুজন মিলে যোগ করেন ৩৩ রান। ফলে জয়ের পথেই ছিল হায়দরাবাদ।
দলীয় সংগ্রহ ঠিক ১০০ পূরণ হতেই আউট হন ১৫ রান করা মনিশ। তখনও জয় নিয়ে চিন্তা ছিল না হায়দরাবাদের। কেননা ৬ উইকেট হাতে রেখে ২৩ বলে করতে হতো ২৭ রান। সমীকরণটা একসময় নেমে আসে ১৪ বলে ১৭ রানে, হাতে ছিল ছয়টি উইকেট।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরে যান ২৬ রান করা বিজয়। নিজের সঙ্গে যেন হায়দরাবাদের জয়টাও নিয়ে যান তিনি। কেননা এরপর আর মাত্র ৪ রান করতে পেরেছে হায়দরাবাদ। নির্ধারিত ২০ ওভারের এক বল আগেই ১১৪ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরেছে ১২ রানের ব্যবধানে।
পাঞ্জাবের পক্ষে বল হাতে সবাই দারুণ অবদান রেখেছেন। নিজের ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়েছেন তরুণ লেগস্পিনার রবি বিষ্ণুই। যা বদলে দেয় ম্যাচের গতিপথ। পরে মাত্র ১৭ রানে ৩ উইকেট নেন ক্রিস জর্ডান এবং শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হানা আরশদ্বীপের ঝুলিতে যায় ২৩ রানে ৩টি উইকেট।
অবিশ্বাস্য এ জয়ে প্লে-অফের দাবি আরও জোরদার করল পাঞ্জাব। টানা চার ম্যাচে চার জয় পাওয়া পাঞ্জাবের ঝুলিতে এখন রয়েছে ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট, টেবিলে অবস্থান পঞ্চম। সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে রয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাদের নিচে নামাতে পারলেই প্লে-অফের টিকিট পাবে পাঞ্জাব।
এর আগে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মারমুখী ব্যাটসম্যানরা কেউ জ্বলে উঠতে পারেননি দুবাইয়ের পিচে। ক্রিস গেইল, লোকেশ রাহুল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, নিকোলাস পুরানদের নিয়ে গড়া দল পুরো ২০ ওভার খেলে করতে পেরেছে ৭ উইকেটে মোটে ১২৬ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ধীরেসুস্থে শুরু করেছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। দশম ওভার যখন চলে, ১ উইকেটে রান ছিল ৬৬। সেখান থেকে ২২ রানের মধ্যে আর ৪টি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে লোকেশ রাহুলের দল।
অধিনায়ক রাহুল আর ক্রিস গেইল রান পেলেও টি-টোয়েন্টির সঙ্গে মানানসই ইনিংস খেলতে পারেননি। রাহুল ২৭ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় করেন ২৭, গেইলও ২০ রান করেন ২০ বলে, ২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায়।
ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৩ বলে ১২), দীপক হুদারাও (২ বলে ০)। ফলে ৮৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় পাঞ্জাব। সেখান থেকে দলকে একটু একটু করে যা এগিয়েছেন নিকোলাস পুরান। ২৮ বলে শেষ পর্যন্ত ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন পাঞ্জাবের এই ব্যাটসম্যান, যে ইনিংসে ছিল মাত্র ২টি বাউন্ডারির মার।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন সন্দ্বীপ শর্মা, জেসন হোল্ডার আর রশিদ খান। নিজের ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচ করেন সময়ের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার আফগান রশিদ খান।