ব্যবসায়ীদের কাছে নতি স্বীকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের!

ব্যবসায়ীদের কাছে নতি স্বীকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের!

ঋণ শ্রেণীবিন্যাস এবং পুনঃতফসিল করার নতুন নিয়ম বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো, শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত করা হচ্ছে। ব্যাংকারসহ ব্যবসায়ী মহলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ কথা জানিয়েছে। তবে গভর্নর ড. আতিউর রহমান দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করে। এরপর ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে নতুনভাবে ঋণ শ্রেণীকরণের এই বিধান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে, মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রেণীকরণের সময়সীমাও তিন মাস করে কমানো হয়েছে। যার ফলে, কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পার হলে নিম্নমানে ঋণটি শ্রেণীকৃত হবে। ছয় মাস পর্যন্ত এই পর্যায়ে শ্রেণীকৃত থাকবে। যদি ঋণটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ছয় মাসে গিয়ে ঠেকে, তাহলে তা সন্দেহজনক পর্যায়ে শ্রেণীকৃত হবে এবং তা নয় মাস পর্যন্ত এই পর্যায়ে থাকবে। নয় মাস পার হয়ে গেলে তা মন্দ ঋণে পরিণত হবে। এত দিন তা ছিল এক বছর।

আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়মানুসারে, বিশেষ উল্লেখ্যের হিসাবের (এসএমএ) ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমাও নামিয়ে আনা হয়েছে তিন মাসের বদলে দুই মাসে। অবশ্য স্বল্পমেয়াদি কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম কার্যকর নয়।

খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করা যাবে না। নতুন নিয়মে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি তৃতীয়বারের মতো পুনঃতফসিল ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাকে আর সুযোগ নেওয়া হবে না।

আর কোনো ঋণের বিপরীতে এককালীন অর্থ পরিশোধ (ডাউন পেমেন্ট) করলেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত ঋণ হবে না। যদিও ঋণ তথ্য (সিআইবি) প্রতিবেদন নিয়ে দায়মুক্তি পেয়ে নতুন ঋণ করা যাবে। তবে এই ঋণ পৃথকভাবেই দেখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মাস্টার প্রজ্ঞাপন জারি করার পর এর বিরোধিতা শুরু করে ব্যবসায়ী মহল। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে একাধিকার কথা বলেন। এরপর গত ২৬ জুন সংগঠনের পক্ষে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করা হয়। যদিও প্রজ্ঞাপনটি জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, এফবিসিসিআই সভাপতি বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন।

একই ধরনের অবস্থান নেয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ অন্য ব্যবসায়িক সংগঠন এবং অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনগুলোর পক্ষেও প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

ব্যবসায়ীদের দাবি, এতে করে ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই তারা আগামী ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময় চান।

এদিকে তফসিলি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে এ নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার প্রত্যাহারের আহ্বান জানাবেন।

সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী মহলের চাপের কারণে বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারির আগের নিয়ম এবং পরের পরিবর্তন কি তা পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সূর চৌধুরী অবশ্য বলেন, “প্রজ্ঞাপন স্থাগিত করার কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। এটি জারি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে। আমাদের সেদিকেই যেতে হবে।”

তিনি বলেন, “এছাড়া ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যে না পারলে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে।”

তিনি আরো বলেন, “এই পদ্ধতি চালু হলে, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট যেমন কমবে। অপরদিকে তারা নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে। এখন মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে টাকা আটকে আছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

অর্থ বাণিজ্য