অবন্তি পড়ে ক্লাস টুতে। আজ তার মন খুবই খরাপ। কারণ কাল রবিবার তার অনলাইন ক্লাস হবে না। কাল থেকে তিন ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ। ডিশ টিভিও বন্ধ।
করোনার কারণে বাইরে যাওয়া যায় না। এখন আবার সব বন্ধ । কেন বন্ধ তা নিয়ে তার বাবা ও মা আলোচনা করছে। আলোচনার সব কিছু সে বুঝতে না পারলেও সে এটা বুঝতে পেরেছে কোথাও একটা ঝামেলা আছে।
শুধু অবন্তি নয়, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা আছেন উৎকণ্ঠায়। এই যেমন রাজধানীর মিরপুর এলাকার গৃহিণী সামসুন নাহার বলেন, সমন্বয়হীনতার এই বেড়াজালে বলির পাঠা হচ্ছি আমরা। মেয়ের ক্লাস, পরীক্ষা সব হচ্ছে ইন্টারনেটে। এরজন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগই ভরসা। মোবাইল ইন্টারনেট সহজলভ্য না আবার নেটওয়ার্কের গতিও স্থির থাকে না। আবার নাকি ডিস বন্ধ থাকবে। আমরা গ্রাহকেরা অর্থ খরচ করেও সেবা পাবো না। উল্টো ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
দেশজুড়ে আরো বেশি আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়িরা। যত ছোট উদ্যোক্তা আতঙ্ক তত বেশি। কারণ তার পুঁজি হারানোর ভয় বেশি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে করোনা মহামারীর এই সময়ে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কর্মসূচির ঘোষণায়ও অনড় অবস্থানে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আইএসপিএবি, কোয়াব ও এনটিটিএন অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার না কাটার একপ্রকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে তার অপসারণ এখনও অব্যাহত রেখেছে ডিএসসিসি।
এদিকে,খেসারত নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পরেছেন ইন্টারনেট ও ক্যাবল সেবা গ্রহীতারা। বাড়িতে থেকে ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছেন তারা।
কাফরুল এলাকার আকাশ অনলাইনে নিতপ্রয়োজনীয় নানা পন্য বিক্রি করেন। তিনি বলছেন, ’বড় দোকান তিন ঘণ্টা করে বন্ধ থাকলে তাদের লোকসান হবে কিন্তু আমি কয়েকদিন অর্ডার না পেলে না খেয়ে থাকবো’।
অন্যদিকে, ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণের প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ইন্টারনেট ও কেব্ল টিভি (ডিশ) সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় আছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেব্ল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (কোয়াব)। মাটির নিচ দিয়ে তার সম্প্রসারণের সুযোগ না দিয়েই ঝুলন্ত তার কাটায় সংগঠন দুটির এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে।
আইএসপিএবি’র সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করেই সিটি কর্পোরেশন তার কেটে দিয়েছে। ফলে, এরিমধ্যে আইএসপিএবি এবং কোয়াবের আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৩৩টি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, এক লাখের বেশি চাকরিজীবী এবং এক হাজার আইএসপিএবি ও কোয়াব সদস্য চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা এগোচ্ছি, এমন সিদ্ধান্ত সেই পথে একটা বড় বাধা। তবে তাদের এমন ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্তও যৌক্তিক। তার সম্প্রসারণের বিকল্প না করেই যদি তার কাটা হয় তাহলে তারাই বা কী করবে?
‘একটা সুপারশপের পজ (পয়েন্ট অব সেল) মেশিনও ইন্টারনেটে চলে। একদম তৃণমূল পর্যায়েও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ রাখছি যেন বিষয়টির একটা সুরাহা হয়।’
তিনি বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে আমাদের প্রচুর ক্ষতি হবে। আমরা সার্ভিস দিতে না পারলে বিদেশি গ্রাহকেরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এটা তো আর সাবমেরিন ক্যাবলের সমস্যা না যে পুরো পৃথিবীজুড়ে হচ্ছে। বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে এই বার্তাই যাবে যে, এই দেশে সরকার আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনে এমনটা হচ্ছে।
তবে আজকের (শনিবার, ১৭ অক্টোবর) মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। আলোচনায় সমাধান না এলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বেসরকারিখাতের পাশাপাশি সরকারিখাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য তিনি আইএসপিএবির সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তারা জানালো দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরশুও তাদের তার কেটেছে। এমন অবস্থায় তাদের পিঠ তো দেয়ালে ঠেকে গেছে। উত্তর আলোচনা করে একটা অবস্থায় এসেছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের কথাও শোনে না। তাহলে এই ব্যবসায়ীরা আর কী করবে? আমরা সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা নিয়েও চিন্তিত আছি। ই-নথির মাধ্যমে ফাইল চালাচালি হয়। তাহলে সেখানেও তো সমস্যা হবে। ডিস সংযোগ বন্ধ থাকলে এতগুলো গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত সবার সঙ্গে কথা বলে যাবো। কোয়াব, আইএসপিএবিকে বলবো সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে আর কী কর্মসূচি নেওয়া যায়। বাকিটা দেখা যাক।