ব্রিটিশ কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে চীনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ১৫ তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে হংকংয়ে। চীনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে হংকংয়ের দায়িত্বভার চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে অর্পণ করে ব্রিটেন।
মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্রীকরণের দেড় দশক পূর্তি উপলক্ষে ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য কেন্দ্রটিতে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও। অনুষ্ঠানের শুরুতে রোববার দিনের প্রথমভাগে হংকংয়ের শাসন কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে স্থানীয় ব্যবসায়ী লিউয়াঙ চুং ইয়াঙকে শপথ পাঠ করান তিনি। ব্রিটিশ কর্তৃত্ব থেকে চীনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর নগরীর শাসন কর্তৃপক্ষের তৃতীয় প্রধান নির্বাহী হিসেবে শপথ নিলেন লিউয়াঙ।
এদিকে নগরীর গণতন্ত্রপন্থি প্রতিবাদকারীরা হংকংয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা বর্তমানে অনুসৃত হংকংয়ের শাসক মনোনয়ন পদ্ধতির প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদকারীদের দাবি হংকংয়ে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করা হয় তাতে ভূখণ্ডের শাসক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ হংকংবাসীদের থেকে চীনা ইচ্ছাই বেশি প্রতিফলিত হয়।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী হংকংয়ের বাসিন্দা ১ হাজার ২শ’ জন ব্যবসায়ী এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি পরিষদ নগরীর শাসক হিসেবে একজন প্রধান নির্বাহী নির্বাচন করে থাকে। গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লিয়াঙ ১২শ’ ভোটের মধ্যে ৬৮৯ ভোট পেয়ে প্রধান নির্বাহী পদে নির্বাচিত হন।
তবে এ নির্বাচনে হংকংয়ের ৩৪ লাখ ভোটারের কোনো ধরণের অংশগ্রহণ নেই। সাধারণ ভোটাররা মূলত স্থানীয় কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। তবে ২০১৭ সালের মধ্যেই হংকংবাসী তাদের নেতা এবং ২০২০ সালের মধ্যেই সব আইনপ্রণেতা নির্বাচনের অধিকার লাভ করবে বলে এর আগে অঙ্গীকার করে চীনা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর স্বপক্ষে চীনা কর্তৃপক্ষের কোনো সদিচ্ছা প্রদর্শিত হয়নি বলে দাবি করছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিরা।
এদিকে হংকংয়ের নতুন প্রধান নির্বাহীর শপথ অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট হু নতুন নেতা লিউ চুং ইয়াঙকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি তিনি মূল ভূখণ্ডতে একীভূত হওয়ার ১৫তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানকে উচ্ছাসপূর্ণ হিসেবেও অভিহিত করেন। শপথ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি হংকয়ের ক্ষেত্রে চীনের অনুসৃত ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’ নীতির পক্ষেও তার সমর্থন পুর্নব্যক্ত করেন।
এ ব্যবস্থার অধীনে হংকংয়ের অধিবাসীরা চীনা শাসনে থাকলেও মূল ভূখণ্ডের থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়ে থাকে।
এদিকে নগরীর পোতাশ্রয়ের পাশে অবস্থিত অনুষ্ঠানস্থলে চীনা প্রেসিডেন্টের ভাষণের সময় এক প্রতিবাদকারী চীন বিরোধী স্লোগান দেন, সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় নিরাপত্তকর্মীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে হংকংয়ের জমির দাম রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায়, সম্পদ বৈষম্য ব্যাপক মাত্রায় রুপ নেওয়ায এবং পর্যাপ্ত গণতন্ত্রের অভাবে সাধারণ হংকংবাসীর ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
শতাব্দীকালেরও বেশি সময় বৃটিশ ঔপনিবেশিক কলোনি হিসেবে শাসিত হংকং ১৯৯৭ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে একীভূত হয়। একত্রীকরণের পর থেকে ভূখণ্ডটি চীনা শাসনের অধীনেই ব্যাপক মাত্রার স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে আসছে। তবে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিরা আরও অধিক গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে।