বিএসটিআই থেকে গুণগতমান নিশ্চিত করে লেখা ও ছাপার কাগজ সরবরাহ এবং বাজারজাত করার নিয়ম থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম মানছে না। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে একদিকে যেমন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা। এতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার।
অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ ব্যাপারে বারবার আবেদন জানালেও নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের ২৬ মে সরকার এক গেজেটে (SRO 187-L/84) বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কর্তৃক লেখা ও ছাপার কাগজের গুণগত মান যাচাই করে বিক্রয় ও বিতরণ বাধ্যতামূলক করে। গেজেটে এ আইন লঙ্ঘনকারীদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় ও বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিও বিধানও রাখা হয়।
সরকারি এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রকৃত মান নিশ্চিত করে বিএসটিআই থেকে সিএম লাইসেন্স নেয়। তারা দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাগজ সরবরাহ ও বাজারজাত করে আসছে।
কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের গুণগত মান যাচাই না করে অর্থাৎ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত বিএসটিআই’র লাইসেন্স গ্রহণ না করে সরকারি আইন লঙ্ঘন করে দরপত্রের মাধ্যমে কম মূল্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ ও বাজারজাত করে আসছে। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ড (এনসিটিবি), বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ, মুদ্রণ ও বাজারজাত করার অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি এ আইন ঠিকমতো পরিপালন না হওয়ায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর ভোক্তারা প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৃত প্রতিষ্ঠান তথা ব্যবসায়ীরা পণ্যের উচ্চ মান বজায় রেখেও অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্মে বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। এজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স গ্রহণকারী এমন ভুক্তভোগী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের কাছে কাগজ না নিতে এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লিখিত আবেদন জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
এমনকি সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনসিটিবি-তেও অনুমোদনহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাগজ দরপত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টন কাগজ ব্যবহার করা হয়।
অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কাছে কাগজ না নেওয়ায় ক্ষোভ, হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করেছে উৎপাদনকারী ও প্রিন্টার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
বাংলাদেশ পেপার মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি নওশেরুল আলম বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন প্রতিপালন ও সরকারের রাজস্ব আদায়সহ জাতীয় স্বার্থে বিএসটিআই’র আইন যথার্থ পরিপালন করতে হবে। এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হবে না। লাভবান হবে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো।
লাইসেন্স গ্রহণকারী ও পণ্যের উচ্চ মান নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পক্ষে তিনি এ ব্যাপারে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।