নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র চাঞ্চল্যকর লোকমান হোসেন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মামলার তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল লোকমান হত্যার ৮ মাস পর নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ হত্যা মামলায় জড়িত ১২ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন।
তবে মামলার বাদী নিহত লোকমানের ছোট ভাই বর্তমানে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুলের মামলায় দেওয়া ১৪ আসামির মধ্যে ১১ জনকেই চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রধান আসামি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ায় বাদী এ চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে জানিয়ে এ ব্যাপারে ফের তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- নাজমুল হাসান শরীফ ওরফে কিলার শরীফ, হাজী মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, মো. আওলাদ হোসেন, মো. সারোয়ার হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন সরকার ওরফে আশরাফুল সরকার, আব্দুল মতিন সরকার, মাহফুজ হোসেন ওরফে তাওয়াব ওরফে সবুজ, হাজী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, মো. শাহিন এবং পলাতক আসামি মো. মোবারক হোসেন মোবা, ইসু সরকার ওরফে শিবলী সরকার ও হীরু ওরফে কামরুল হাসান।
লোকমান হত্যা মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এই ১৪ জন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে ১১ জনই চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
এজাহারভুক্ত বাকি ৩ জন হলেন নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ আব্দুল মতিন সরকার, তার ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার ওরফে আশরাফুল সরকার এবং মোবারক হোসেন মোবা।
নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই বর্তমানে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নামে নরসিংদী সদর মডেল থানায় লোকমান হত্যাকাণ্ডের ২ দিন পর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চার্জশিট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঞা, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম, স্থানীয় রহমান প্রেসের মালিক মনোয়ার হোসেন খান মঈন, পৌরসভার ভেলানগর গ্রামের সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত মানিক কমিশনারের ভাই হিরণ মিয়া, আমির হোসেন আমু, মামুন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর এপিএস মাসুদুর রহমান মুরাদ, বিএনপি নেতা তারেক আহমেদ তারেক, আওয়ামী লীগ সমর্থক মো. কবির সরকার, ও নরসিংদী কলেজের সাবেক ভিপি মিঞা মোহাম্মদ মঞ্জুর।
এদিকে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নরসিংদী পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও নিহত লোকমান হোসেনের ছোট ভাই ও মামলার বাদী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ চার্জশিট ঠিক হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজুর ভাইসহ সব খুনিদের বাঁচানোর জন্য জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে মন্ত্রী রাজুর নির্দেশে।‘
তিনি বলেন, ‘নরসিংদীবাসীসহ বাংলাদেশের কোনো মানুষ এ চার্জশিট মেনে নেবেন না।’
তিনি বলেন, ‘এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে আমি নারাজি দেবো। জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ফের তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, দীর্ঘ তদন্ত শেষে এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।