রোববার থেকে শুরু হচ্ছে নতুন অর্থ বছর। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের বাজেট পাস হয়েছে। তবে বিদায়ী অর্থ বছরের ২০ হাজার কোটি টাকার দায় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে শুরু করতে হচ্ছে নতুন অর্থ বছর। অন্যদিকে, ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ বেড়ে যাবে।
বিদায়ী অর্থ বছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। তবে, অর্থ বছরের শেষ প্রান্তিকে এসে গত মার্চে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক বৈঠকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ২৭ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য মতে, সর্বশেষ হিসাবে সরকারের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহ তফসিলি ব্যাংকগুলো পাবে ২০ হাজার ২৯ কোটি টাকা। এর ৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ। আর ১৫ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে।
অপরিশোধিত এই দেনা শেষ সময়ে এসেও পরিশ্ধো করল না সরকার। তাই বাধ্য হয়ে এটি পরের অর্থ বছরের সাথে সম্বনয় করতে হবে। ফলে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
সূত্র বলছে, ২০১১-১২ অর্থ বছরের শেষে এসে সরকারের ব্যাংক ঋণ মোট পরিমাণ গিয়ে দাড়ালো ৯২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। যা এর আগের অর্থ বছরের চেয়ে চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থ বছর শেষে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ছিলো ৬৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
এদিকে শেষ মুহুর্তে এসে সরকার প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০ জুনে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিলো ১৮ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। এর পর ৬ কার্য দিবস পায় সরকার। ৬ দিনে প্রায় ১১শ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকা ঋণ করেছে সরকার।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শেষ মুহুর্তে এসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু হয়। অর্থ ছাড়ের অনেকটা হিরিক লাগে। অবশ্য এটি অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে স্বীকার করেন। তিনি গত ২৩ জুন অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ বেশি ছাড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে ঠিকাদারদের অর্থ।
তিনি এও বলেন, এতে হয়তো কিছু অর্থ অপচয় হচ্ছে। তা হোক। এডিপির ঐ অর্থ যোগান দিতে সরকার শেষ সময়ে এই অস্বাভাবিক হারে ঋণ নেয়।
সূত্র বলছে, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে উপায় উপকরণ আগাম, ওভার ড্রাফট, ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড, অভার ড্রাফট, মুদ্রায় দায়ের মাধ্যমে সরাসরি ঋণ সুবিধা নেয়। চলতি অর্থ বছরের শেষে এসে এই স্থিতি দাঁড়ালো ৪ হাজার ৩৮১ কোটিতে।
অন্যদিকে, প্রাইমারি ডিলার ১৬টি ব্যাংক থেকে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সংগ্রহ করে। ঋণপত্র, ট্রেজারি বিল ও বন্ড, সিকিউরিটিজ ও অন্যান্য বন্ডের মাধ্যমে এই ঋণের যোগান হয়। যার পরিমাণ অর্থ বছরের শেষে রয়ে গেলো ১৫ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজমী বাংলানিউজকে জানান, অর্থ বছর শেষ। সরকারের ঋণ যে পরিমাণ অপরিশোধ্য থাকল তা পরের বছরের সঙ্গে সম্বনয় করা হবে। এবং এটা মোট ঋণ হিসেবে ধরা হবে। তাছাড়া সবগুলো ঋণ এক সঙ্গে পরিশোধ যোগ্য হয়না। তবে সরকারকে নিয়মিত হারে সুদ পরিশোধ করে যেতে হয়।
তথ্যমতে, গত ৪ ডিসেম্বরে তা ২৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ডিসেম্বরের পর থেকে ধীরে ধীরে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমতে শুরু করে। সবশেষ এপ্রিলে এসে তা ১৫ হাজার কোটিতে নামে। সেখান থেকে মে মাসে আবার তা বাড়তে শুরু করে।