আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের সকল প্রকার স্বার্থ অক্ষুণ্ণ ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিবৃতি দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে রাজনৈতিক মিথ্যাচার হিসেবে অভিহিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল সত্যকে আড়াল করে মনগড়া বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান খোঁজার জন্য দ্বিপাক্ষিক-ত্রিপাক্ষিকসহ বহুপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দাবি তোলা হয়েছে এবং তা বলবৎ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের উপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সফলতার কারণেই করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উস্কানিমূলক ও দূরভিসন্ধিমূলক, অসত্য বক্তব্য রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের মানবিক উদ্যোগ এবং কূটনৈতিক তৎপরতা জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত করেছে। একই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে শেখ হাসিনার পদক্ষেপের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সফলতা যখন দৃশ্যমান তখন বিএনপি মহাসচিবের এই ধরনের বক্তব্য দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত দেয়। রোহিঙ্গা ইস্যুর শুরু থেকেই বিএনপি মিথ্যা-বিভ্রান্তকর ও ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতি জানে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবৈধ ক্ষমতা দখলসহ বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে তাদের সময় বাংলাদেশে ‘দুর্নীতি ও নতজানু পররাষ্ট্র নীতি’ ছাড়া স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্রনীতি বলতে আদৌ কিছু ছিল না। অবশ্য, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তাদের কাছে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার আশা করা যায় না।’
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলতার সাথে সরকার পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশ আজ অপরাপর রাষ্ট্রের সাথে সুদৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের নন্দিত নেত্রী। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্বখ্যাত সাময়িকী করোনাকালে জননেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার ৭৪তম শুভ জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উষ্ণ শুভেচ্ছা-অভিনন্দন পাঠান। অপরদিকে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। বিএনপির রাজনীতি খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনের মতোই মিথ্যা, শঠতা আর ষড়যন্ত্রে ভরপুর।’
তিনি বলেন, বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুসম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যমান সুসম্পর্কই বিএনপির গাত্রদাহের কারণ। কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্হিভূত ও দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব পুনরায় বিএনপি’র রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিবের মিথ্যাচারপূর্ণ বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে। তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে বিএনপি রোহিঙ্গা সংকটের কোনো প্রকার সমাধান চায় না। জাতি জানতে চায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিএনপি কী কী ভূমিকা রেখেছে? নিজেদের দুর্নীতিবাজ নেতাদের রক্ষার চেষ্টা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের স্বার্থরক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা কী?